মাদারীপুর: নাব্যতা সংকটের কারণে দিন দিন মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন নদনদী 'মরে' যাচ্ছে। পরিবর্তন হয়েছে বেশ কয়েকটি নদীর গতিপথও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল, নিলখী, বাঁশকান্দি, শিবচর, দ্বিতীয়াখণ্ড এলাকায় রয়েছে মৃত বেশ কয়েকটি নদী। শিরুয়াইল থেকে নিলখী হয়ে প্রবাহিত নদীটি এক সময় আড়িয়াল খাঁ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে নদীটি 'মরা আড়িয়াল খাঁ' নামে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে ভরাট হয়ে নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে।
অন্যদিকে শিবচর পৌর এলাকা সংলগ্ন বহুল পরিচিত নদীটির নাম ময়নাকাটা। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরে উঠলেও শুকনা মৌসুমে অনেক স্থান শুকিয়ে যায়। পানি প্রবাহের গতিপথ দিন দিন ভরাটসহ নদীর উভয় পার ক্রমান্বয়ে দখল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নদীটি। এছাড়া, পদ্মার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা দ্বিতীয়াখণ্ড, কুতুবপুর এলাকাতেও রয়েছে মরা নদী।
পানি উন্নয়নবোর্ড মাদারীপুর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় কাগজে-কলমে ১৭টি নদনদী থাকলেও আড়াইশো’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা, পালরদী, ময়নাকাটা, বিষারকান্দিসহ দৃশ্যমান নদ-নদীর সংখ্যা মাত্র ১০টি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করায় অস্তিত্ব সংকটে জেলার নদনদীগুলো। ইতোমধ্যে হারিয়েছে নাব্য। কয়েকটি নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, একসময়ের খরস্রোতা নদীগুলো আজ মৃত প্রায়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো বাঁচিয়ে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ড্রেজিংয়ের অভাবে শিবচরের বিলপদ্মা নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। নদীর উভয় পাড়েই চর জেগে দিন দিন শুকিয়ে আসছে নদীটি। অথচ একসময় লঞ্চসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করতো নদীটি দিয়ে।
এদিকে আড়িয়াল খাঁ নদের পরেই বড়সড় নদী হিসেবে পরিচিত জেলার কুমার নদ। তবে আড়িয়াল খাঁ খরস্রোতা হলেও কুমার নদ দিন দিন অস্তিত্ব হারাচ্ছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং-এর অভাবে কোথাও তৈরি হয়েছে বালুচর। হারিয়েছে নাব্য, হারিয়ে জৌলুসও। বর্ষা মৌসুম ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে কুমার নদে নৌ চলাচল সম্ভব হয় না। অনেক স্থানেই নদের মাঝে ভরাট হয়ে কাদাপানি দেখা যায় শুকনা মৌসুমে।
শিবচরের শিরুয়াইল এলাকার মরণচন্দ্র শীল নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'আমাদের শিরুয়াইল বাজারের পাশের নদীটি এখন আর নদী নাই! এটা আড়িয়াল খাঁ নদেরই একটি অংশ। একসময় এটাই বড় নদী ছিল। এখন এর কোনো গতিপথই নেই। নদীর মাঝে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে। শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায়। নদীর মধ্যে এখন ফসল ফলানো হয়। '
শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শুম্ভুক গ্রামের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, 'আমাদের বাড়ির কাছে বিল পদ্মা নদী। কালের বিবর্তনে এখন অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। এই নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ চলছে, ট্রলার চলছে। এখন চর পড়ে শুকিয়ে গেছে। '
এদিকে সদর উপজেলার হবিগঞ্জ এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, 'এখানে হবিগঞ্জ সেতুটি বিশাল বড়! পুরোটাই নদী। তবে এখন আর নদী নাই। সেতুর ৫ ভাগের একভাগও এখন নদী নেই। নিয়মিত ড্রেজিং করা হলে নদীর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। '
এছাড়াও পদ্মা সংলগ্ন মাদবরেরচর এলাকার নদীসহ পদ্মা নদীতেও শুকনো মৌসুমে চর পরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর আশপাশেও জেগেছে বিশাল চর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান বলেন, 'নদীর পানি প্রবাহ সচল ও ধারণক্ষমতা বাড়াতে সমীক্ষা করে নদ-নদীগুলোতে নেওয়া হবে খননের উদ্যোগ। তবে আপাতত ড্রেজিং করার কোনো প্রকল্প হাতে নেই। '
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
আরএ