ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৫০০ টাকা না দেওয়ায় রোগীকে বেডের ওপর ফেলে দেন ওয়ার্ডবয়, দুই মিনিটেই মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
৫০০ টাকা না দেওয়ায় রোগীকে বেডের ওপর ফেলে দেন ওয়ার্ডবয়, দুই মিনিটেই মৃত্যু মেয়েকে হারিয়ে মা ও স্বজনদের হাসপাতাল চত্বরে আহাজারি। ইনসেটে মৃত স্বপ্না বালা

ফরিদপুর: হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার স্বপ্না বালা (৩২)। সকালে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ও সুইপার এসে ওই রোগীর স্বজনের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করেন।

সে টাকা না দিলে ক্ষুব্ধ হন তারা। মুমূর্ষু রোগীকে তুলে অন্য একটি বেডে নিয়ে ফেলে দেন ওই ওয়ার্ড বয় ও সুইপার। টানাহেঁচড়ায় রোগী স্বপ্না বালার ক্যানুলা দিয়ে রক্ত উঠে যায়। অক্সিজেনও ঠিকমতো লাগিয়ে না দেওয়ায় দুই মিনিটের মধ্যেই মারা যান স্বপ্না।  

মেয়ের এমন মৃত্যুতে স্বপ্নার মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে রোগীর স্বজনদের কিল-ঘুষিও মারেন ওই দুই কর্মচারী।  

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রোগীর স্বজনরা।

মারা যাওয়া রোগী স্বপ্না বালা (৩২) জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের বিশোরীকান্দি গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ বালার মেয়ে এবং পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া গ্রামের রমেন হালদারের স্ত্রী। তার ছোট দুই শিশুসন্তান রয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন ওয়ার্ড বয় আনোয়ার মোল্যা ও সুইপার সমেস মিয়া।

জানা যায়, শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে স্বপ্না বালার বুকে ব্যথা উঠলে হলে রাত ৯ টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে এনে ভর্তি করেন তার মা মিনি বালা দাস। পরদিন সকালে এসে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আনোয়ার মোল্যা ও সুইপার সমেস মিয়া এসে ৫০০ টাকা দাবি করেন।  

সরেজমিনে হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করছেন মা মিনি বালা। এ সময় তার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি এবং জড়িতদের বিচার চান।

কান্নারত মিনি বালা বলেন, আমার মেয়েকে ঠাস করে এনে এই বেডে ফেলে দিয়ে যায়। তখন আমার ছেলেকেও টেনে নিয়ে মারে ওরা। আমার বুকের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গেছে দুইড্যা লোক। ওদের বিচার না হলে ওরা আরও মায়ের বুক খালি করে দেবে।

স্বপ্না বালার স্বামী রমেন হালদার বলেন, সকালে হাসপাতালের দুইজন কর্মচারী এসে ৫০০ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় জোরপূর্বক আমার স্ত্রীকে অন্য একটি বেডে দিয়ে দেয়। তখন রোগীর ক্যানুলা দিয়ে রক্ত উঠে যায় এবং অক্সিজেনও ঠিকমতো লাগিয়ে দেয়নি। ওই সময় স্বপ্না বলছিলেন, তার বুকে বেশি ব্যথা হচ্ছে। এর দুই মিনিটের মধ্যেই মারা যায় সে। আমি এর বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় আমার শ্যালক আকাশ ও মামাশ্বশুর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তাদের কলার ধরে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে তাদের কিল-ঘুষি দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুমায়ূন কবীরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন অভিমান্ন নামে মারা যাওয়া রোগীর এক স্বজন।  

তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, ওয়ার্ড বয় আনোয়ার মোল্যা ও সুইপার সমেস মিয়া রোগীর স্বজনদের কাছে এসে বলেন, এই বেডে রোগীকে রাখা যাবে না। তখন পাঁচ মিনিট সময় চাইলে জোর করে ওই রোগীকে অন্য বেডে নিয়ে যায় এবং ভালো বেড দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দেয়ায় অভিযোগকারীর গায়ে হাত দেন তারা এবং ওই বেডে নেয়ার দুই মিনিটের মধ্যে মারা যায় রোগী স্বপ্না।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, গতকাল শনিবার রাতে স্বপ্না বালাকে মুমূর্ষু অবস্থায় আনা হয় এবং তাকে অবজারভেশন বেডে রেখে যথেষ্ট চিকিৎসা দেয়া হয়। আমাদের চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিল না।

তিনি আরো বলেন, আজ সকালে ওই রোগীকে অবজারভেশন বেড থেকে অন্য একটি বেডে নেয়া হয়। ওয়ার্ড বয়দের টাকা না দেওয়ায় জোর করে ওই বেডে নেয়ার পরে রোগী মারা যায় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। ওয়ার্ড বয় আনোয়ার এবং সুইপার সমেস মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। স্বজনরা সময় চাওয়ার পরেও কেন তাকে বিছানা পরিবর্তন করা হলো। ওরা দুইজন যদি এ ধরনের অন্যায় করে থাকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।