রংপুর: রংপুরের নুরপুর কবরস্থানে চির নিদ্রায় সমাহিত হয়েছেন বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন বড়দা।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বাদ জুমা গুপ্তপাড়া মসজিদে নামাজের জানাজা শেষে তাকে নুরপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
জানাজা নামাজে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহাফুজ উন নবী ডন, রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজ) সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকসহ বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ী, আত্মীয়-স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে তার জানাজা এবং দাফন কার্যে অংশ নেয়নি সরকারি কোনো কর্মকর্তা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
আশরাফ হোসেন বড়দা ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভাষা আন্দোলন অংশ গ্রহণ করার কারণে আশরাফ হোসেন ১৯৫৪ সালে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ১৯৫৫ সাল থেকে রংপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। নগরীর গুপ্তপাড়ার নিউক্রস রোডের ডুয়ার্স ভবন ছিল ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেনের ঠিকানা।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও রংপুরের পীরগঞ্জ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মওলানা ভাসানী তাকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টি গঠন করেন। এই দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাত দলীয় জোটে যোগ দেন এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জোট ভেঙে গেলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৭ সালে রংপুর জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও পরে আহ্বায়ক হন। ২০১০ সালে তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। আরও শোক জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, বাসদ, নাগরিক ঐক্য ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে, সিটি প্রেসক্লাব, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রংপুর, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-টিসিএ, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।
শোক বার্তায় নেতারা বলেছেন, ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেন বড়দা ছিলেন। তার মৃত্যুতে একজন অকৃত্রিম অভিভাবক হারালো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
এএটি