ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস শনিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস শনিবার

ঢাকা: ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন।


 
পলাশির প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার দীর্ঘ ১৯০ বছর পর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত দুটি রাষ্ট্র নতুনভাবে পথচলা শুরু করে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ব পকিস্তান নামে বাংলাদেশের পথচলা প্রথম থেকেই বাংলার জনগণ মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। যার ফলে ১৯৫২ সালের মায়ের ভাষা রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালিরা।
 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নিদের্শনায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। সালাম, বরকত, রফিকের জীবনের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এর পরবর্তীতে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮-এর আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলন ’৬২-এর কুখ্যাত হামুদুর রহমানের শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারা বাংলার জনগণকে পাকিস্তানিদের শোষণ-নির্যাতন-নিপীড়ন-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মনস্থির করতে সাহস যুগিয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
 
সে কারণে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা বাংলার জনগণের কাছে পৌঁছে দেন। ছয় দফার প্রতিটি দফায় তিনি বাঙালিদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উদ্ধুদ্ধ করেন। সেই ছয় দফা গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় এমনভাবে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন যে বাংলার জনগণ এটাকে মুক্তির সনদ হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করেছিল। ’৬৯-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্ত করা, সর্বোপরি ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার ফলেই বাঙালিরা বাংলার স্বাধীনতার চূড়ান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখতে শুরু করেছিলেন।
 
’৭০-এর নির্বাচনের পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রদান করতে যখনই গড়িমসি শুরু করলো, তখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চে দিক-নির্দেশনামূলক, কর্মপরিকল্পনার সমন্বয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করার লক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে লাখো জনতার সামনে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছিলেন, বাংলার জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রেষ্ঠ নির্দেশনা হিসেবে তা গ্রহণ করেছিলেন।
 
’৭১-এর ২৫ মার্চ কালো রাতে হঠাৎ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির উপর অতর্কিত হামলা চালায়। চালানো হয় মুর্হুমুহু গুলি। হাজারো মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় পবিত্র বাংলার মাটি। জাতির পিতাকে ওই রাতেই গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে। গ্রেফতারের আগেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার জনগণকে আহবান জানিয়ে একটি বার্তা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে পাঠান। যা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নানের চট্টগ্রাম বেতারের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে পাঠ করে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
 
জাতির পিতার অবর্তমানে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনাসহ দেশের সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। জাতির পিতার অবর্তমানে জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ. এইচ. এম কামরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের সকল নেতবৃন্দ বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিবর্গকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
 
বীর বাঙালিরা ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়ে এবং বীরঙ্গণাদের মধ্যে দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পাকিস্তানের কারাগারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে অসংখ্যবার হত্যার উদ্দেশ্যে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘‘আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করলে আপত্তি নেই, কিন্তু তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ আমার মরদেহটা আমার বাংলার মানুষের কাছে পাঠিয়ে দিও”।
 
ইস্পাত কঠিন মনোবল ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানিরা জাতির পিতাকে হত্যা করতে সাহস পায়নি। বাংলার দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর ১৯৭২ সালের এইদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন।
 
সেই থেকে সারা বাংলার জনগণ দিবসটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। সারা বাংলার জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে।
 
এ দিবসের আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
 
১০ জানুয়ারি ২০১৫, শনিবার
সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭ টায়: বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
 
১২ জানুয়ারি ২০১৫, সোমবার দুপুর ২টায় জনসভা। স্থান : ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের     উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
 
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম’র আহ্বান
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংগঠনের সব শাখাকে ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জনসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সব শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়া : ০৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।