ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় অপহরণ মামলায় উৎসাহ হারাচ্ছে পুলিশ!

টি. এম. মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫
বগুড়ায় অপহরণ মামলায় উৎসাহ হারাচ্ছে পুলিশ!

বগুড়া: অপহরণ নাটকে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ক্রমেই উৎসাহ হারাচ্ছে বগুড়া পুলিশ। একের পর এক মিথ্যা-বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রকাশ করায় মামলার তদন্ত কাজে উৎসাহ হারাচ্ছে পুলিশ।



সর্বশেষ, ফ্রেস কোম্পানির বগুড়ার ডিলার সামিউল আলম জুমা অপহরণ নাটকের সমাপ্তি টেনে আরো একবার প্রমাণিত হলো, এ ধরনের অপহরণ নাটক বেড়েই চলেছে।  

মঙ্গলবার রাতে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং নিঃসন্দেহে জনগণের সেবক। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। কিন্তু একজন মানুষ ইচ্ছে করে পুলিশকে হয়রানি করলে বিষয়টি মোটেই শোভনীয় নয়। এরপর কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মিথ্যে অপহরণ অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ করায় সমালোচনায় পড়ে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় পুলিশের।

এতে পুলিশ অপহরণ মামলা তদন্তে উৎসাহ হারানোর পাশাপাশি নিজেদের ওপর অর্পিত নিয়মিত কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে পারছে না। তাই, গণমাধ্যম কর্মীদের উচিত সঠিক তথ্য জেনে সংবাদ প্রকাশ করা। এতে পুলিশের কাজে গতি আসবে এবং  জনগণও উপকৃত হবে।

সিনিয়র এএসপি জানান, সামিউল আলম জুমা (৩৫) বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া বেনিচাকী লেনের মৃত শফিউল ইসলামের ছেলে। তিনি ফার্ম ফ্রেস বগুড়ার ডিলার হিসেবে দত্তবাড়ী জামিল শপিং সেন্টারের পেছনে অফিসে কাজ করেন। ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় অফিসের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। ওই দিনই তার স্ত্রী শারমিন পিংকি ব্যবসায়িক বিরোধ রয়েছে দাবি করে শহরের বাদুরতলা এলাকার ফজলে রাব্বী মুকুল ও তরিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অপরহরণ করেছে মর্মে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

পুলিশ অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করে ফজলে রাব্বী মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। ঘটনাটি নিশ্চিত অপহরণ উল্লেখ করে পরদিন সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা (নম্বর- ২৮/তারিখ- ২৯-১২-২০১৪) করেন নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী শারমিন পিংকি।

মামলার দুদিন পার না হতেই কতিপয় জেলা পুলিশের সমালোচনা করে কিছু গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদগুলো ভুল জেনেও অপহৃত উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ বিনা প্রতিবাদে কাজ করতে থাকে। যদিও তখনও জেলা পুলিশ নিশ্চিত ছিল বিষয়টি সাজানো, অপহরণ নয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএ’র নির্দেশে একাধিক টিম উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তদন্তকালে জানা যায়, জুমা প্রথমে যশোরে গিয়ে একজন পরিচিতের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোবাইল ফোনের সিমকার্ড সংগ্রহ করেন। এরপর অপহরণ কাজে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। যশোরে থেকে যান বেনাপোলে। পর্যায়ক্রমে সেখান থেকে যান চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে।

মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলাসহ জুমার গতিবিধি দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এটি সাজানো ঘটনা। এ অভিযানে সিনিয়র এএসপি নাজিরসহ বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ (ওসি/ডিবি) আমিরুল ইসলাম, বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুলহাজ্ব ডিবি এসআই আরিফুর রহমান অংশ নেন।

পরবর্তীতে একজন নারীর সহযোগিতায় বিশেষ কৌশলে নিখোঁজ জুমাকে বগুড়ায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে বাসার সামনে থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সামিউল আলম জুমা স্বীকার করেন, কোম্পানির কাছে ঋণ থাকা এবং পারিবারিক অশান্তির কারণে তিনি আত্মগোপন করে অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌস ওয়াহিদের আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় সামিউল আলম জুমা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি পুলিশের কাছে দেওয়া বক্তব্যই সঠিক বলে স্বীকার করেন।

এর আগে বিগত এক বছরে স্কুল শিক্ষক হায়দার আলী, স্কুলশিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার ও সুমনসহ কমপক্ষে ২০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।     

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।