ঝিনাইদহ: ২০১৫ সালের ১১ মাসে ঝিনাইদহে ৬৪ জন খুন হয়েছেন। আর এ সময়ে আরও ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এছাড়া খুন হওয়া ৭টি লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে।
এছাড়া ১১ মাসে জেলায় ২৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ১০টি। আর উল্লেখিত সময়ে ৩৬৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।
এ হিসাব অনুযায়ী খুনসহ উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে রয়েছে- ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২৫ জন, শৈলকুপায় ১৪ জন, মহেশপুরে ১৪ জন, কোটচাঁদপুরে ৯ জন, কালীগঞ্জে ১৪ জন ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ৫ জন।
পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা আনন্দ ঘোষসহ জেলায় চারজন খুন হয়। ফেব্রুয়ারিতে খুন হয় ৮ জন, এর মধ্যে বিএসএফ জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটায় মহেশপুরের লেবুতলা সীমান্তে।
এছাড়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের মাঠে দুলাল ও পালাশ নামে দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়, মার্চ মাসে জেলায় ৪ জনের লাশ উদ্ধারসহ খুন হয় ৮ জন, এর মধ্যে কোটচাঁদপুরের ভোমরাডাঙ্গা গ্রামে মুক্তিপণের দাবিতে মাদ্রাসা ছাত্র মিরাজকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এপ্রিল মাসে ৩টি লাশ উদ্ধারসহ খুন হয় ৬ জন, মে মাসে জেলায় খুনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ১১ টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, এর মধ্যে কালীগঞ্জে স্ত্রীর পরকীয়ার শিকার হন রফিউদ্দিন নামে মোচিকের এক কর্মচারী, কোটচাঁদপুরে দলীয় কোন্দলে নিহত হন সোনা মিয়া নামে এক শ্রমিকলীগ নেতা, জুন মাসে ৪ জন নিহত হন, এরমধ্যে মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গায় বিএসএফ’র নির্যাতনে জাহাঙ্গীর নামে এক বাংলাদেশি ও ব্যাপারীপাড়ার স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী তরিকুল ইসলামকে শহরের গুলশানপাড়ায় খুন হয়।
জুলাই মাসে লাশ উদ্ধারসহ নিহত হন ৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার অচিন্তনগর গ্রামে শিশু মনিরাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়, আগস্টে জেলায় নারীসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়, এর মধ্যে শৈলকুপার বড়মৌকুড়ি গ্রামে গ্রাম্য সংঘর্ষে আব্দুল ওহাব নামে এক ব্যক্তি নিহত হন, সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় খুনসহ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে শৈলকুপায় যুবদল নেতা খুন হন।
অক্টোবর মাসে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকার রেললাইনে যশোর আওয়ামী লীগের কর্মী এনামুল হককে হত্যা করা হয়। ২০ অক্টোবর একই উপজেলার ফারাশপুর গ্রামে মা তাসলিম ও মেয়ে তাসনিমকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ২৫ অক্টোবর সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলাকার কাশিমপুর গ্রামে আব্দুল আজিজকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।
৩১ অক্টোবর সদর উপজেলার ওয়াড়িয়া গ্রামে মীম নামে এক কিশোরীকে হত্যা করা হয়।
১ নভেম্বর মহেশপুর উপজেলায় এরশাদ আলী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ২৬ নভেম্বর কালীগঞ্জ যশোর সড়কে মনিরউদ্দীন নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৭ নভেম্বর শৈলকুপার বড়বাড়ি গ্রামে মজুমদারপাড়ার ভ্যান চালক মিরাজ হোসেনকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে।
এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আজবাহার আলী শেখ বাংলানিউজকে জানান, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো ছিল। বর্তমানে চরমপন্থিদের কোনো বিস্তার নেই। সামাজিক বিরোধও কমে এসেছে। এ জেলায় ১১ মাসে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কয়েকটি ছাড়া সবগুলোর মোটিভ ও ক্লু পুলিশ উদ্ধার করেছে।
এছাড়া অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান এএসপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৬
পিসি/