ঢাকা: ৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী কোনো নারীই নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বয়সের বিবেচনায় এখানে বৃদ্ধ নারীরাও নিরাপদ নয়।
নারী নির্যাতন রোধ কার্যক্রমের সঙ্গে পুরুষ সমাজকে যুক্ত করতে হবে। গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। এতে অনেক কমে যাবে নারী নির্যাতন।
‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন চিত্র: ২০১৫’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের একদল কর্মী সমীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শেষে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়ষী মেয়েদের কন্যা শিশু এবং ১৮ বছরের বেশি সব নারীদের প্রাপ্তবয়স্ক বলে গণ্য করা হয়েছে।
নির্যাতন হিসেবে বলা হয়েছে- শারীরিক, পেশাগত ক্ষমতার অপব্যবহার, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষাগত আচরণ, মন্তব্য, যৌন সর্ম্পক স্থাপনের দাবি, পর্নোগ্রাফি প্রদর্শন, অশালীন ভাষা প্রয়োগ, চিঠি, টেলিফোন, মোবাইল, এসএমএস, পোস্টার, নোটিশ, কার্টুন, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল দেয়াল লিখন, চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রদর্শন, প্রেমের প্রস্তাব, হুমকি, মিথ্যা প্রলোভন বা প্রতারণার মাধ্যমে যৌন সর্ম্পক তৈরি করা ইত্যাদি।
নারীদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে কিছু সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এতে বলা হয়েছে, নারী নির্যাতনের প্রচলিত আইন সংস্কার করে সময়োপযোগী করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন। ফতোয়া কার্যকরের নামে বিচার বর্হিভূত এবং বেআইনি ঘোষণা করা। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোটের রায়ের যথাযথ বাস্তবায়ন করা। নারী ও শিশু পাচার রোধ ও উদ্ধারে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সাউথ এশিয়ান ইন্টারপোল গঠন। জন প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা বাড়ানো, নির্যাতিতদের সহজে অভিযোগ করার ব্যবস্থা করা। নারী নির্যাতনবিষয়ক জেন্ডারভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করা। যৌন হয়রানি ও নিপীড়নসহ সব ধরনের নারী নির্যাতন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করে প্রচারণা চালাতে ব্যাপক সমন্বিত প্রকল্প হাতে নেওয়া। সিড ও সনদের পূর্ণ অনুমোদন এবং বাস্তবায়নে আইন প্রণয়ন। নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে পারিবারিক আইন প্রণয়ন। অর্থনীতির মূল স্রোতে নারী সমাজকে যুক্ত করা। নারীর প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে এমন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে জেন্ডার সমতা অর্ন্তভুক্ত করা। জাতীয় শিক্ষানীতি জেন্ডার সংবেদনশীল করা। প্রশাসন বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব ধরনের প্রশিক্ষণে সিড ও সনদ, ভিয়েনা ঘোষণা ও পরিকল্পনা এবং বেইজিং পিএফও অর্ন্তভুক্ত করা।
সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে- নারী নির্যাতনবিরোধী আইন সর্ম্পকে নারীদের জানানো, দক্ষতা বাড়নো, জেন্ডার সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে গণমাধ্যমকে সক্রিয় করা, নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সবার উদ্যোগ নেওয়া, শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আরও সমৃদ্ধ করা, পুরুষ ও যুব নারী সমাজকে নারী নির্যাতনবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত করা, পুরুষ সমাজকে যুক্ত করে গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
মহিলা পরিষদের গবেষণায় বলা হয়েছে, ৫ বছরের শিশুর প্রতি সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি, ৭৫ বয়স নারীর প্রতিও একই দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান রয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশু ধর্ষণ হয় ৭৫ শতাংশ। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীর সংখ্যা ৫৭ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৭৩ শতাংশ শিশু এবং ৩৭ শতাংশ নারী।
গণধর্ষণের ক্ষেত্রে শিশু শিকার হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। আর প্রাপ্ত বয়স্ক ৬৫ শতাংশ। জাতিসংঘ ১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বালক ও বালিকা হিসেবে গণ্য করে থাকে। সে হিসাবে, ধর্ষণের শিকার মোট নারীর প্রায় ৭৫ শতাংশ কন্যা শিশুর বয়স ২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। বয়সের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার ৭৫ শতাংশ শিশু, পরিপূণ নারী হয়ে ওঠার আগেই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে নারী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণি, অপর ব্যক্তি, গোষ্ঠীর শ্রেণির ওপর নির্যাতন করে আসছে। সমাজে দু-শ্রেণির নির্যাতন বেশি হয় শারীরিক ও মানসিক। শারীরিক ছাড়াও মানসিক আরও বহু ধরনের নির্যাতনের ঘটে থাকে।
** ৫৩ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর: ১৪, ২০১৬/ আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা
এসই/টিআই