ঢাকা: যুদ্ধ জয়ের দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে সেই যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনালেন বাংলাদেশের সেই পরীক্ষিত বন্ধুরা। তারা সবাই মিত্র।
অনুষ্ঠানের শুরুতে একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা দুই দেশ মিলে সেদিন একটি যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের সম্পর্ক রক্ত দিয়ে লেখা। ভারতের হাজার হাজার যোদ্ধা যারা বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদের এই অবদান খুব সহজ কোনো বিষয় নয়।
পরে একে একে বক্তৃতা করেন ভারত থেকে আসা ২৮ জনের প্রতিনিধি দলের কয়েকজন। তারা শোনান, নিজ নিজ অভিজ্ঞতার গল্প।
আরও পড়ুন:
***তারা বন্ধুদেরও সেরা বন্ধু
***বাবা বলেছিলেন, আমি মেয়েদের খুঁজলে যুদ্ধ দেখবে কে
** লে. জেনারেল সিহোতা শোনালেন মানবতা ও সাহসিকতার গল্প (ভিডিও)
***হেমন্ত সারদেশাই ঠেকিয়ে দেন নিয়াজির পলায়ন
** বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধন রক্ত দিয়ে লেখা
** মুক্তিযুদ্ধের গল্প আসরে বাংলাদেশ-ভারতের যোদ্ধারা
জিপি ক্যাপ্টেন হেমন্ত সারদেশাই শোনান তার ৪নং সেক্টরের দায়িত্ব পালনের গল্প। জানান, হঠাৎ এক রাতে খবর এলো রেঙ্গুন থেকে একটি প্লেন এসে জেনারেল নিয়াজিকে নিয়ে যাবে। সেটি অবতরণ করবে ঢাকা তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়েতে। তার দায়িত্ব হলো নিয়াজি যাতে কোনোভাবেই পালাতে না পারেন।
সে লক্ষ্যে দায়িত্ব নিয়ে হেমন্তের নেতৃত্বে সকাল থেকেই শুরু হয় বোমা হামলা।
হেমন্ত বলেন, ছোট্ট রানওয়ে, ঘন কুয়াশা। তার মধ্যে এই হামলা ছিল খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু তারা পিছপা হননি। একের পর এক বোমা ফেলতে থাকেন রানওয়ের ওপর। ফলে রেঙ্গুন থেকে আসা প্লেন আকাশ থেকেই ফিরে যায়।
নিজের অভিজ্ঞতার গল্প তুলে ধরে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল জি এস সিহোতা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই মহান হয়ে আছে। এখানে আমরা অনেক কিছুই দেখেছি, এদেশের মানুষের সঙ্গে মিশে অনেক মানবতার ঘটনাও চাক্ষুস করেছি। যা আমাদের আজও মনে আছে।
তার মতে, বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের হামলা ছিল মানবতার বিরুদ্ধে।
তবে বাংলাদেশিদের মানবিক অনেক আচরণেও মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে সহায়তা করার মতোই আজীবন মিত্রবাহিনী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস দেন ভারতীয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা ভনত মদন মোহন।
তার কণ্ঠে শোনা যায় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের নিঃস্বার্থ ত্যাগ, সাহস আর দেশপ্রেমের প্রশংসা। সেসবের জোরেই নাকি স্বল্প শক্তি নিয়েও পাক সেনাদের পরাস্ত করেছিল বাঙালিরা।
অনুষ্ঠানে কয়েকজন ভারতীয় যোদ্ধার মুখে শোনা যায় সেক্টার কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নাম। আর অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তারই উত্তরসূরী ও বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্য মাহজাবিন খালেদ। পরে তাকে অনুরোধ জানানো হয় বাবার স্মৃতি কথা শোনানোর জন্য।
এরপর খানিক সময় কথা বলেন তিনি।
এদিকে, বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। আর তা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বলে। তার আগে মোনায়েম খান, খান আবদুস সবুর খানের মতো নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করলেও তারা কেউ পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াননি। বরং পাক শাসকদের দালালি করে গেছেন তারা। বঙ্গবন্ধু্ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ। ছোট্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও আজ বিশ্ব নেতারা বলেন, ফলো শেখ হাসিনা, ফলো বাংলাদেশ।
ভারতকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু উল্লেখ করে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
জেপি/আইএ