ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অন্ধকার মহাখালী ডিএনসিসিতে গাঁজার আড্ডা

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
অন্ধকার মহাখালী ডিএনসিসিতে গাঁজার আড্ডা ছবি: উর্মি মাহবুব

সাত একর জায়গায় গড়ে উঠেছে মহাখালীর ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটটি। তিন বছর আগে কাজ শুরু হলেও কলাপসেবল গেটটি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়নি আজও। 

ঢাকা: সাত একর জায়গায় গড়ে উঠেছে মহাখালীর ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটটি। তিন বছর আগে কাজ শুরু হলেও কলাপসেবল গেটটি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়নি আজও।

 

চারদিকে শুনশান নীরবতা। ভবনের ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে ধূলোর স্তর। সচরাচর দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিরাও আসেন না এখানে। আর তাই ছয়তলা ভবনের সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও উদ্বোধন না হওয়ায় স্থানীয় বখাটেদের গাঁজা সেবনের নিরাপদ আখড়া হয়েছ মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডিএনসিসি মার্কেটের মূল ভবনের পাশে গাছের নিচে বসে মাদক সেবন করছেন বেশ কয়েকজন যুবক। মূল ভবনের পাশে নির্মাণ হচ্ছে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জোনাল অফিস। ভবনের একজন নির্মাণ শ্রমিক নাম না প্রকাশ করার শতে জানান, সামনে ট্রাক ও বাসস্ট্যান্ড। এখানকার বখাটেরা এখানে এসে দিনে দুপুরে গাঁজাসহ নানা মাদকদ্রব্য সেবন করেন। কিন্তু দেখার কেউ নেই। কে কী বলবে? এখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরাও অনেক সময় ভয়ে কিছু বলেন না।

স্থানীয় চা ফেরিওয়ালা আনিস বলেন, গাড়ির ডেরাইভাররা একটু আধটু গাঁজাতো খায়ই। তা বাইরে গ্যাঞ্জাম বেশি, তাই মার্কেটের ভেতরে গিয়া খায় আরকি। মার্কেট তো এহনো শুরুই হয় নাই। তাই সমস্যাও হয় না।  

৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মার্কেটটি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে আনসার সসদস্যরা মার্কেটটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আনসার সদস্য মনিরুল।

তবে মার্কেটের ভেতরে মাদক সেবনের বিষয়টি স্বীকার করেননি মনিরুল।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কেটে ১৬ জন আনসার সদস্য তিন শিফটে কাজ করছেন। এখানে কোনো ধরনের মাদক সেবন হয় না।  

কবে নাগাদ মার্কেট উদ্বোধন হতে পারে জানা নেই তার।  

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, কারওয়ানবাজার থেকে এই মার্কেটে পাইকারি বাজার স্থানান্তর করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা চাচ্ছেন না। ফলে একাধিকবার দোকান বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিলেও সাড়া মেলেনি তেমন। ফলে কোনো সমাধানে পৌঁছুতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।  ছবি: উর্মি মাহবুব

সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ানবাজারের যানজট কমাতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণের কথা ছিল। সিদ্ধান্ত ছিল, কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীদের নতুন বাজারগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। ২০১০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগে বিভক্ত হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তিন দফা সময় বাড়িয়ে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুনে কাজ শেষ হয়। এর মধ্যে মহাখালীর বাজারটির নির্মাণকাজ শেষ হয় সবার আগে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে মহাখালীর বাজার চালুর প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীদের দোকানের জন্য আবেদন করতে বলা হলেও তারা কোনো আবেদনই করেননি। ফলে এখনও মার্কেটটি পড়ে আছে অব্যবহৃত।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
ইউএম/এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।