ঢাকা: সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘এ দেশ আমাদের সকলের।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত ‘নতুন অর্থনৈতিক চিন্তা: বাংলাদেশ ২০৩০ ও পরবর্তী সময়’ (New Economic Thinking: Bangladesh 2030 and Beyond) শীর্ষক কনফারেন্সের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।
দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হবে। মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৬০০ ডলারে উন্নীত হবে’।
‘একই সঙ্গে রফতানি আয় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। দেশের বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বর্তমান ২.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস্- এর ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে’।
‘২০৪১ সালে আমাদের অর্থনীতি এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে’।
তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্য অর্জনে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, বাণিজ্যের প্রসার, রেমিটেন্স বৃদ্ধি, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে কাঙ্খিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো বলে আশা করি’।
২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশ বিশ্বে একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করবে। ২০৩০ সালের আগেই আমরা তা করতে পারবো’।
‘লক্ষ্য পূরণে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন, বাণিজ্য খরচ হ্রাস, অগ্রাধিকারমূলক শিল্পে বর্তমান সরকারের নৈতিক ও আর্থিক সহায়তা অব্যহত রয়েছে’।
স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে আর্থিক, নীতিনির্ধারক ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকারের সহযোগিতা অব্যহত থাকবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের উন্মুক্ত অর্থনীতি উপ-আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক অর্থনৈতিক সর্ম্পক উন্নয়ন এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে উইন উইন অবস্থান তৈরি করে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে’।
‘২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের লক্ষ্যে আর্ন্তজাতিক ও প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি’।
২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। ২০২১ সালে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হবো’।
সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন, সুসংহত শিল্পোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে ইকোনমিক জোন অথরিটি, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, সকল উন্নয়নের জন্য পিপিপি অফিস, দেশি ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ উন্নয়নে সময়োপযোগী শিল্পনীতি, রপ্তানি নীতি এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিতকরণ, সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, ২০২১ সালে আইটি সেক্টরে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান, ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির টার্গেট নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এমডিজি বাস্তবায়নের মতো এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ মডেল হিসেবে পরিচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, মেট্রোরেল, আন্তঃদেশীয় রেল প্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের মতো ফার্স্ট ট্রাক প্রকল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও ডিসিসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্যে একটি তাকে নিয়ে লেখা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।
সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি হোসেন খালেদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিঙ্গাপুর বিনিয়োগ করপোরেশনের চেয়ারম্যান লিম সিয়ং গুয়ান।
**এমডিজির মতো এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ হবে রোল মডেল
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এমইউএম/এএসআর