শাজাহানপুর (বগুড়া) ফিরে: বছর সাতেক আগের ঘটনা। ঢাকা-বগুড়াগামী দু’টো যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
প্রায় তিন বছর আগে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আছড়ে পড়ে। এতে মারা যান ৫-৬জন। আহত হন অনেকেই। এর মধ্যে ঘটে গেছে ছোট-বড় আরো অসংখ্য দুর্ঘটনা। মারা গেছেন নাম জানা-অজানা অনেক মানুষ। আহত হয়ে চিরদিনের জন্য পুঙ্গত্ব বরণ করছেন অনেকেই। কিছুদিন আগেও বাসচাপায় নিহত হন একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক। পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে মৃত্যুর মিছিল। দীর্ঘ হচ্ছে আহতের তালিকাও।
ঘটনাস্থল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের নয়মাইল এলাকা। এটি মহাসড়কের ‘ডেথস্পট’গুলোর একটি। এখানে মহাসড়কের ওপর প্রায় ত্রিশ বছর ধরে হাটবাজার বসে আসছে। মানুষ ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপে হাটবারে মহাসড়কের এ স্থান দিয়ে থেমে থেমে যানবাহনকে চলতে হয়। এরপরও ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ঝরছে প্রাণ।
বৃহস্পতিবার (২২ডিসেম্বর) নয়মাইল হাটে গেলে কছিম উদ্দিন, খলিলুর রহমান, আলিমুদ্দিনসহ একাধিক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তাদের মুখে শোনা যায় এরকম অনেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা।
মহাসড়কের মাঝ বরাবর বাস। সামনে দিয়ে দাপিয়ে ছুটছে ভটভটি। কয়েকটি ভ্যানও দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে কাঁধে বস্তাভর্তি সবজি নিয়ে মহাসড়ক পার হচ্ছেন কয়েকজন বয়স্ক মানুষ। মহাসড়কের দু’ধার ঘেঁষে ক্রেতা-বিক্রেতা গিজগিজ করছে। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রচণ্ড ভীড়।
ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত ভ্যানগুলো মহাসড়ক দিয়ে ছুটে আসা যানবাহনের সামনে ও পাশ ঘেঁষে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। অনেক সময় হাটের বিক্রেতারা জায়গা না পেয়ে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য মহাসড়কের পাশে রেখেই বিক্রির জন্য বসে পড়ছেন। ক্রেতারাও মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করছেন।
হাটে আসা লোকজনসহ পথচারিরা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এছাড়া মহাসড়কের দু’পাশ ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা। সব মিলিয়ে মহাসড়কের ওপর চলছে ভয়ঙ্কর ‘মরণমুখি’ তৎপরতা।
চা-বিক্রেতা মাহবুব আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘চোখের সামনে কত মানুষ মরলো তার কোনো ইয়েত্তা নেই। বড় দুর্ঘটনায় দূর-দূরান্তের মানুষ বেশি মারা যান। ছোটখাটো দুর্ঘটনায় স্থানীয়রা বেশি মারা পড়েন। হাটবার ছাড়াও এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কোরবান আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও সোমবার নয়মাইল হাট বসে। এ হাট ঘিরে এখানে প্রতিদিন সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার বসে। হাটবাজার বসায় মহাসড়কের পাশ দিয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মহাসড়ক ঘেঁষে জমজমাট হয়ে উঠেছে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মরণের ঝুঁকিও। ’
সেখানে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, আঞ্চলিক রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক যত্রতত্র পার্কিং করছে। সরাসরি এসবের চাপ এসে পড়ছে মহাসড়কের ওপর। এতে করে মহাসড়কে যান চলার পথ সরু হয়ে এসেছে। দিন যতই যাচ্ছে এ প্রবণতা আরো বাড়ছে। মন্তব্য করেন কোরবান আলী।
এছাড়া দাঁড়ানো গাড়িগুলো হুটহাট ছাড়ছে। আবার ইচ্ছেমত থামছে। সাধারণ মানুষজন কিছু বুঝেই ওঠার আগেই ঘটছে দুর্ঘটনা। মহাসড়ক পার হতে ও পাশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে মানুষকে।
এনিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তাদের প্রায় সবাই বলেন, নয়মাইলে দুর্ঘটনা কমাতে হাট স্থানান্তরের কোনো বিকল্প নেই। নইলে যতোই দিন যাবে হাটের পরিধি আরো বাড়বে। মহাসড়ক ছাড়া দু’পাশে আপতত হাট বসার কোনো জায়গা নেই। এভাবে চলতে থাকলে এমন এক সময় আসবে যখন পুরো হাটটাই মহাসড়কের ওপর বসে যাবে।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নয়মাইল হাটের নিজস্ব কিছু সম্পত্তি রয়েছে। সেই সম্পত্তিসহ নতুনভাবে জায়গা অধিগ্রহণ করে হাটটি মহাসড়ক থেকে দূরে স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক নির্দেশনা পাওয়া গেলে হাটটি সরানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তখনই কেবল দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। ’
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এমবিএইচ/জেএম