ঢাকা: আর ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার নয়, এখন থেকে সুবিধাভোগীরা ভাতা নেবেন ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানারের মাধ্যমে।
সুফলভোগীদের হাতের আঙ্গুলের ছাপ বিভিন্ন কারণে, যেমন- হাতের কাজ, বটির কাজ, গৃহস্থালির কাজ কিংবা চর্মরোগের কারণে অস্পষ্ট হয়ে যায়।
এ অনিয়ম রোধে ফিঙ্গার প্রিন্টের বদলে ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানার দিয়ে আঙ্গুলের ভেতরের শিরার রক্ত সঞ্চালনও শনাক্ত করা যায়। যার মাধ্যমে প্রকৃত ব্যক্তিকে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। ফলে সঠিক সুবিধাভোগীদের যাচাই করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
পরীক্ষামূলকভাবে ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানারের মাধ্যমে ভাতা দেওয়ার কাজ শুরুও হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে বয়স্ক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত সুফলভোগীরা ভাতা পাচ্ছেন আর ধরা পড়ছেন জাল ছাপ দিতে আসা ব্যক্তিরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, প্রাথমিকভাবে ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি)’ প্রকল্পের আওতায় ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানার পদ্ধতি চালু হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল পাঁচ লাখ দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী সন্তানের মায়েদের নগদ অর্থ সহায়তা করবে সরকার। রংপুর ও ঢাকা বিভাগের ৭টি জেলার ৪২টি উপজেলার ৪৪৩টি ইউনিয়নের ১৬ লাখ পরিবার থেকে ওই ৫ লাখ দুস্থ নারীকে বাছাই করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে। বাকি ৩৮ কোটি টাকা দেবে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৬২টি ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানার কেনা হবে। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহারে জন্য আরও ২ হাজার ৭৭২টি পিওএস (পয়েন্ট অফ সেল) মেশিনের পরিবর্তে ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানারসহ পিওএস মেশিন কেনা হবে।
গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ- এ সাত জেলায় দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। অপুষ্টির হারও দেশের অন্য এলাকাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। প্রকল্প এলাকা বাছাইয়ে এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী বছর থেকে প্রাথমিকভাবে এ জেলাগুলোতে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে ৬৪টি জেলাকেই এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
দেশব্যাপী মোট পাঁচ লাখ দরিদ্র গর্ভবতী মা ও তাদের ০ থেকে ৫ বছর বয়সী সন্তানদের এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। একজন মা সর্বোচ্চ দু’টি ভাতা পাবেন। অর্থাৎ কোনো মায়ের ০ থেকে ৫ বছর বয়সী দু’টি সন্তান থাকলে তিনি শুধু দুই সন্তানের ভাতা পাবেন। পরবর্তীতে গর্ভবতী হলেও ওই মা আর কোনো ভাতা পাবেন না।
একজন মা গর্ভকালীন অবস্থায় চার ভিজিটে ২০০ টাকা করে পাবেন। অন্যদিকে সন্তানের বয়স ০ থেকে দুই বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। শেষ ধাপে সন্তানের বয়স দুই বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত ৩ মাস পর পর এক হাজার টাকা করে পাবেন।
আইএসপিপি প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে টাঙ্গাইলে এ ব্যবস্থা চালু করে অনেক সুফল পেয়েছি। আগামী বছরের শুরুতেই কিছু জেলায় চালু করবো। এর পরেই ব্যাপক পরিসরে পুরো দেশজুড়ে ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানার চালু করবো। এতে করে প্রকৃত সুফলভোগীরাই সেবা পাবেন, অন্য কউ এখানে প্রবেশ করতে পারবেন না’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর