ঢাকা: স্বামীর চাপ, আত্মীয়-স্বজনদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয় এবং সাংসারিক অর্থনৈতিক সংকটে আত্মঘাতী জঙ্গি হচ্ছে নারীরা। কেউই নিজের ইচ্ছায় এ পথে পা বাড়াননি।
জঙ্গি দলে নারীদের যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব সিগমা হুদা বলছেন, আন্তঃজঙ্গি বিয়ে, স্বামীর চাপ, নৈতিক শিক্ষা, পারিবারিক নিরাপত্তা, সাবলম্বী হওয়ার আশা, মৌলবাদী প্রচার ও ধর্মের ভুল ব্যাখায় এ পথে আসছে নারীরা।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বিশেষজ্ঞদের এই মতামতের পক্ষ নিয়ে বলেন, স্বামীদের চাপের কারণে এ পথে আসতে বাধ্য হচ্ছে নারীরা। স্বেচ্ছায় কোনো নারীকে এ পথে আসতে দেখা যায়নি।
নারীদের জঙ্গিদলে ভেড়ার বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি আমরা যেসব ঘটনা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে, এর পেছনে পারিবারিক কারণ সবচেয়ে বেশি দায়ী।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, জঙ্গি জাহিদ ও জিয়ার বিষয় দু’টোতে দেখা যাচ্ছে, জাহিদের স্ত্রী শীলা ও মূসার স্ত্রী তৃষা মনি জঙ্গি দলে ভিড়েছেন। এই দুই নারীর দিকে তাকালে বোঝা যায়, এটি শুধু পারিবারিক কারণে সম্ভব হয়েছে। আমরা নারীদের সরাসরি জঙ্গি না বলে সহযোগী বলতে পারি। আইএস’র সঙ্গে যেসব নারীরা জড়িত তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। এই পথ থেকে নারীদের ফিরিয়ে আনতে মৌলবাদের প্রচার বন্ধ এবং পারিবারিক নিরাপত্তা প্রয়োজন।
নারীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সিগমা হুদা বাংলানিউজকে বলেন, জঙ্গিরা তাদের দল ভারী করার জন্য বিভিন্নভাবে মানুষকে দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যায় বিশ্বাসী। জঙ্গিবাদ তাদের নেশার মতো।
পারিবারিক কারণে নারীরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে উল্লেখ করে সিগমা হুদা বলেন, বেশিরভাগ নারীরাই জঙ্গি দলে জড়িয়ে থাকে পারিবারিক কারণে। এ পর্যন্ত যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তারা হয়তো স্বামীর কারণে অথবা পরিবারের কেউ জঙ্গি দলের সদস্য হওয়ায় জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছেন। তারা বুঝতে পারেন না, এটি ভুল পথ।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণখানে আমরা একজন নারীর আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়টি দেখলাম, সেটাও তার স্বামীর কারণে। স্বামীকে বাঁচাতে তিনি আত্মাহুতি দিলেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, স্বামীর চাপে বা সামাজিক কারণে নারীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। নব্য জেএমবি’র কোনো নারী নিজের ইচ্ছায় জঙ্গিবাদে জড়ায়নি। বিভিন্ন সময়ে আটক ও আত্মসমর্পণ করে রিমান্ডে থাকা নারীদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অভিযানে পাওয়া আলামত ও প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা গেছে, সামাজিক কারণে, আত্মীয় স্বজনদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এবং স্বামীদের চাপে তারা জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়েছেন।
‘এছাড়া জঙ্গি নেতারা তাদের সন্তানদেরও জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে চান। জঙ্গি স্বামীরা মনে করেন, স্ত্রী-সন্তানকে তাদের মতাদর্শে আনা গেলে উদ্দেশ্য সফল হবে।
চলতি বছর জুলাই মাসে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে তিন নারীকে আটক করা হয়, যাদের স্বামীরাও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। একই মাসেই সিরাজগঞ্জ শহরে জেএমবি’র সন্দেহভাজন চার নারীকে আটক করা হয়। অগাস্ট মাসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে চার নারীকে র্যাব আটক করে।
গত ০৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ইতলী গ্রাম থেকে চার নারী আটক হন। ওই পরিবারের ছেলে ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ অক্টোবরে গাজীপুরের এক জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে তানভীরের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, গুলশান হামলায় জড়িত নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি ও জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিনকে পুলিশ আহত অবস্থায় আটক করে।
শনিবার ওই বাড়িতে অভিযানের সময় দুই শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করেন পলাতক জঙ্গি রাশেদুর রহমান সুমনের স্ত্রী শাকিরা ওরফে তাহিরা (৩৫) এবং মিরপুরে নিহত নব্য জেএমবি’র নেতা সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ওরফে শিলা (৩৪)।
অভিযানের এক পর্যায়ে পলাতক জঙ্গি রাশেদুর রহমান সুমনের স্ত্রী শাকিরা ওরফে তাহিরা (৩৫) এক শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে এসে কোমরে বাঁধা গ্রেনেড ফাটিয়ে আত্মঘাতী হন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
আরএটি/এসএনএস