ঢাকা: আগামী তিন মাসের মধ্যে বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
বাংলাদেশের নদ-নদীর দখল-দূষণ প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে ঢাকা শহরের চারপাশের নদীর (বুড়িগঙ্গা, আদি বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও টঙ্গিখাল) ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নদ-নদী দূষণ, দখল, নিয়ন্ত্রণ, জীব বৈচিত্র্য উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ আমিন ফিদা আব্দু্ল্লাহ খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাজাহান খান বলেন, নদী রক্ষার ব্যাপারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন জঙ্গিমুক্ত হচ্ছে, তেমনি নদীগুলো দখলমুক্ত হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে আদি বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত হবে।
নদী দখলকারীদের ‘নব্য রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, একাত্তরে যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল, তারা জাতির কাছে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং তাদের বিচারকাজ হচ্ছে। আজ যারা নদীর প্রাণ হরণ করছে, নদী দখল ও দূষণ করছে, তাদেরকেও আমরা ‘নব্য রাজাকার’ হিসেবে মনে করছি। এই ‘নব্য রাজাকারদের’ও বিচার হবে।
নদী রক্ষায় আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়-ই আন্তরিক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২-১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭টি ড্রেজারের ব্যবস্থা করেছিলেন। তারপর আর কোনো সরকার নদীর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজার সংগ্রহ করেনি।
আমরা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯-২০১৫ সালে মোট ১৪টি ড্রেজারের ব্যবস্থা করেছি। প্রাইভেট কোম্পানিগুলো আরো ৪৫টি ড্রেজার কিনেছে। ২০১৪-২০১৯ সালের জন্য আরো ২০ ড্রেজার কেনার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে ১০টি ড্রেজার কেনা হয়েছে।
সুতরাং নদীর দখল, দূষণ মুক্ত করার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পরিবেশবিদরা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা তাদেরকে পাশে পাচ্ছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, নদী দখল-দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বলে তিনি বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।
সমাজের ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী, বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যার যার জায়গা বা এলাকায় যদি একটু ঘুরে দাঁড়ান, তখন এ নদী রক্ষা কোনো কঠিন কাজ হবে না। কারণ, সাধারণ মানুষ নদী দখল করে না। সমাজের ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী, বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধিরাই নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত।
আইনুন নিশাত বলেন, লন্ডনের টেমস্ নদীতে এক সময় এতো বেশি বর্জ্য ছিলো যে, সেখানে মাছ, পোকা-মাকড়, জলজ উদ্ভিদ বলে কিছু ছিল না। ষাটের দশকের পর সেই নদীকে এমনভাবে ক্লিন করা হয়েছে, এখন সেখানে স্যালমন ফিশ খেলা করে।
সুতরাং আমাদের বুড়িগঙ্গাকেও ক্লিন করে আগের সেই জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব, যেখানে শত শত নৌকা ইলিশ মাছ শিকার করতো। বুড়িগঙ্গার পানি সরাসরি পান করতে পারতো ঢাকাবাসী।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আতাহারুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দর্শক সারিতে অবস্থান নেওয়া পরিবেশবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এজেড/জেডএস