ঢাকা: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কুফল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ছোট থেকে সচেতন করতে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে শিশুদের মাথায় শান্তি, সুন্দর ও উন্নত জীবনের কথা ঢোকাতে হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে গণভবনে প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের অনুলিপি নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ভুল পথে কেউ যেন না যায়। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জনমত সৃষ্টি ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম এবং যারা ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তাদের প্রত্যেকের কাছে অনুরোধ ছোট-ছোট শিশুদের মনে ঢোকাতে হবে আমরা শান্তি চাই, উন্নতি চাই। নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। ’
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান বাংলার মাটিতে হবে না।
কোনো ধর্ম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের পথ কখনও ইসলামের পথ নয়। ইসলামের পথ শান্তির পথ। জঙ্গিবাদের কোনো স্থান এখানে নাই। ’
প্রতিযোগিতামূলক সময়ে টিকে থাকতে নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষিত জাতি পারে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। নিজেদের মর্যাদা নিজেদের তৈরি করতে হবে। ’
অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। একটু যত্ম নিলে তারা অনেক ভালো কিছু করবে। এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। ’
প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং সমমানের পরীক্ষাগুলো হওয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান ও যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষাগুলো হওয়া উচিত, সেটা আবার বলা দরকার। অনেক অভিভাবক এ ব্যাপারে অনিহা প্রকাশ করেছিলেন। কী কারণে সেটা আমার বোধগম্য নয়। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা হয়, ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। অতীতে নিয়ম ছিলো বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ক্লাসের কয়েক জনকে বেছে নিয়ে তাদের সারাক্ষণ পড়ানো হতো। তারা যেন বৃত্তি পায়। শিক্ষকরা তাদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেন। বাকি ছেলেমেয়েদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থীকে বেছে নিয়ে পড়ানোর চেয়ে আমরা বৃত্তি অনেক বৃদ্ধি করে দিয়েছি। সবাই পরীক্ষা দেবে। সেখান থেকে যারা মেধাবী তারা বৃত্তি পাবে। ৪০/৫০ জনের মধ্যে বৃত্তির জন্য ১০ জনে বেছে নিলাম। বাকিদের মধ্যেও তো মেধাবী থাকতে পারে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে এসএসসি পরীক্ষা দিতে গেলে অনেকে নার্ভাস থাকতো, বমি করে দিতো। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীদের থেকে অভিভাবকরা বেশি নার্ভাস থাকেন। ছোটবেলা থেকে পরীক্ষা দিয়ে বোর্ডের পরীক্ষায় একটা অভ্যস গড়ে ওঠে। পরীক্ষা দিতে-দিতে বিশ্বাস সৃষ্টি হচ্ছে তাদের মধ্যে। ’
তিনি বলেন, প্রতিটি স্তরে একেকটা সার্টিফিকেট পেলে তাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। তাদের ভিত্তিটাই গড়ে ওঠছে মজবুতভাবে।
ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এবং পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে পরীক্ষা ফলাফলে অনুলিপি তুলে দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
**আমরা শান্তি চাই, সুন্দর জীবন চাই
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এমইউএম/টিআই