শেরপুর (বগুড়া): যাত্রী তুলতে বাম লেনে মহাসড়ক জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বাস। পাশেই কয়েকটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।
লরির প্রায় গা ছুঁয়ে ট্রাকটির এই বিপজ্জনক ওভারটেকিংয়ের সময় একটু এদিক-সেদিক হলেই ঘটে যেতে পারতো ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা।
বাংলানিউজের ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি ছবি অন্তত সেটাই বলে দিচ্ছে। এ চিত্র ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ‘মরণবাঁক’ নামে পরিচিত বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর বাজার এলাকার। এ মরণবাঁকেই গত ১২ নভেম্বর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ সাতজন।
গত মঙ্গলবারও (২০ ডিসেম্বর) বাসের চাপায় নিহত হন অটোরিকশা চালক। এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর এখানেই একটি মালবাহী ট্রাক ও মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক।
মহিপুর বাজারের সামান্য দক্ষিণে পরপর এ রকম আরো দু’টি বাঁক রয়েছে। মহাসড়ক হয়ে বাজার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার উত্তরে গেলে গাড়িদহ বাসস্ট্যান্ড। সেখানে পৌঁছানোর আগে এই বাঁক দু’টি পেরুতে হবে।
গাড়িদহ বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে মহাসড়ক থেকে পশ্চিম-পূর্বে দু’টি সড়ক নেমে গেছে। এর মধ্যে পশ্চিমের আঞ্চলিক বগুড়া-নাটোর সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত অসংখ্য ছোট-বড় ও ভারী যানবাহন চলাচল করে এই সড়কে।
এই সড়ক থেকে যখন গাড়িগুলো মহাসড়কে উঠে আসে তখন বেশিরভাগ সময়ই চালকরা গাড়ির স্পিড কমিয়ে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের অবস্থান বিবেচনা করেন না।
আকস্মিকভাবে সাইডরোড থেকে গাড়িগুলো এভাবে উঠে আসায় গতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হন মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা। অনেক সময়ই তা না করতে পারায় ঘটে দুর্ঘটনা।
এদিকে মহিপুর ও গাড়িদহ এলাকায় মহাসড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে বাজার। অসংখ্য স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে দু’পাশ ঘেঁষে। নির্মাণ হয়েছে মার্কেট। রয়েছে চা-স্টল, হোটেল, ভাজিপুরির দোকান। মহিপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশেই একটি বড় ধরনের প্রাইভেট স্কুল রয়েছে। কিছুটা ফাঁকে রয়েছে হাইস্কুল, মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে এসব এলাকায় ভিড় বাড়তে থাকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। মহাসড়ক ঘিরে অনেক রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ত থাকেন মানুষ। এসব স্থানে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকসা, ভ্যানসহ স্থানীয় রুটে চলাচলকারী বাস-ট্রাক ইচ্ছেমত মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। সবকিছুই চলে মর্জি মাফিক।
সবমিলিয়ে এ দু’টি স্থানে মহাসড়ক যেন সরু হয়ে এসেছে। ফলে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো।
আরিফুল ইসলাম, রাকিব হাসান, ইউনুছ আলীসহ একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, মহিপুর থেকে গাড়িদহ এলাকার মধ্যে সময়ের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-মাঝারি-বড় ব্যবসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজার।
দিনদিন যানবাহনের চাপ বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী মহাসড়ক প্রশস্ত হচ্ছে না। এছাড়া চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো থামছে না। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা হচ্ছে। মূল্যবান জীবনহানি ঘটছে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সরোয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়কের এই অংশে দুর্ঘটনা রোধ করতে মহাসড়ক ঘিরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকদের হাতে গাড়ি দিতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ইউএনও।
আব্দুস সাকুর, মজিবর রহমান, রেজাউলসহ কয়েকজন চালক বাংলানিউজকে বলেন, কিস্তিতে কেনায় গাড়ির মহাজনরা (মালিক) বেশি ক্যাশ চান। এতে চালককে কম ঘুমিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। অভিজ্ঞ চালকরা তা করতে রাজি না হওয়ায় অনেক মহাজন অনভিজ্ঞ চালকের হাতেই গাড়ির চাবি তুলে দেন। যে কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
বগুড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যথাশীঘ্রই মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
এমবিএইচ/আরআই