গত মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। ডা. মুস্তফা আল্লামা তালুকদার পিয়াল ও নার্স সুষমা রানী মহিলা ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন অন্তঃসত্ত্বা মাজেদা বিবিকে।
নির্মম এ ঘটনা দেশের উচ্চতর আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন।
মৃত সন্তানের বাবা ইলিয়াছ হোসেন বাদী হয়ে চিকিৎসক ও নার্সকে আসামি করে শেরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে কারাবন্দী সেই চিকিৎসককে বাঁচাতে আন্দোলনে মাঠে রয়েছেন চিকিৎসকরা।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালটেন্ট ডা. জয়োৎপলা শুক্লার বিরুদ্ধে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসাসেবা পাননি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুরাইয়া। এ সময় ধরে তাকে নিচতলা-ওপরতলা হয়ে চিকিৎসকের পেছনে পেছনে ঘুরতে হয়।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (০২ জানুয়ারি) দুপুরে। মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার ঘটনাটি জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামী মাসুদ রানা বাবু।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বাগড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা বাবু সোমবার (০২জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে তার ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুরাইয়াকে (২৫) নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
নিয়মানুযায়ী বহির্বিভাগের টিকিট কাটেন। যার নং ৪৬২/২১১। বহির্বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারজানা আকতার তার স্ত্রী সুরাইয়াকে গাইনি কনসালটেন্ট ডা. জয়োৎপলা শুক্লার কাছে রেফার্ড করেন।
কিন্তু চিকিৎসক শুক্লার কাছে গেলে প্রথমে তিনি সুরাইয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক স্ত্রীকে নিয়ে নিচে চেকআপ রুমে যেতে বলেন স্বামীকে। পাশাপাশি বলে দেন, ‘তিনি অন্তঃসত্ত্বা রোগী দেখেন না’।
পরে তার কথামতো তারা নিচে চলে আসেন। এভাবে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেন তারা। চিকিৎসক উপস্থিত থাকলেও চিকিৎসাসেবা পাননি এই দম্পতি। শেষমেষ বাড়ি ফিরে যান তারা।
অভিযোগকারী মাসুদ রানা বাবু বাংলানিউজকে বলেন, ‘এর আগেও আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলো। কিন্তু বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এবার বেশি সতর্ক হয়েছি। কিন্তু তাতে লাভ কী? চিকিৎসক থাকার পরও তারা আমার স্ত্রীকে দেখেননি। আমার মতো মানুষদের কি সেবা পাওয়ার অধিকার নেই?’
বেলা ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান ধর্মঘট-মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিকিৎসক জয়োৎপলা শুক্লা ছুটিতে রয়েছেন বলেও জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে জানতে গাইনি কনসালটেন্ট ডা. জয়োৎপলা শুক্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআইএস/এমজেএফ