কংক্রিটের পাকা সড়ক থেকে কিছু দূরে কাদামাটি মাড়িয়ে এগুলেই দেখা মিলে জলে মাছ, আর সাদা বকের অবাধ বিচরণ। এ যেন মাছ আর বকের অভয়াশ্রম।
আর এর ভেতর থেকেই উড়ে এসে দৃষ্টিসীমা ঘিরে ফেলছে এক ঝাঁক সাদা বক। আবার কখনও চোখের নিমিষে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দৃষ্টিরসীমানার বাইরে। কালো মেঘের মতো ঘন কুয়াশা আর সাদা বক মিলেমিশে একাকার। এ এক অপূর্ব দৃশ্য!
কাছে এগিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে দেখা গেলো, কালো মেঘের তলা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব বক। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখলে বোঝা মুশকিল। এই বিলের মধ্যে টেংগরগাড়ি, শোলাকুড়া, মদনটিকা, খড়িয়াটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে খাবারের জন্য বিচরণ করছে এসব বক।
স্থানীয়দের মতে, গেল দু’বছর আগেও হালতিবিলে এতো পাখির দেখা মেলেনি। বক পাখি দেখতে এখন শহর থেকে লোকজন ছুটছেন হালতিবিলে। অনেকে আবার পাখি শিকারেরও চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয়দের প্রতিরোধে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।
খোলাবাড়িয়া গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আলা উদ্দিন জানান, এক সময় হালতিবিল জুড়ে ছিল আমন ধান, মাছ আর নানা প্রজাতির পাখ-পাখালিতে ভরপুর। পাখি আর মাছ দিয়েই একসময় অতিথি আপ্যায়ন এবং কোর্ট-কাচারিতে মামলার তদবির চলতো। এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি।
হালতি গ্রামের আব্দুল বারিক জানান, এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে হালতিয়া পাখি আসতো এই বিলে। কথিত আছে পাখির নামেই নাকি এই বিলের নামকরণ করা হয়েছে। কানা বক নিয়ে বিখ্যাত গানও রচিত হয়েছে লোকসংস্কৃতিতে।
আফসার আলী জানান, বিলের আমন ধান, মাছ নেই। তাই পাখির বিচরণও তেমন নেই। এখন শুকনো মৌসুমে বোরো ধান আর বর্ষায় ধুধু পানি ছাড়া কিছুই থাকে না।
স্থানীয়রা জানান, ফাঁদ পেতে বক শিকার, কীটনাশক প্রয়োগ, আধুনিক কৃষি যন্ত্রের শব্দ, বর্ষায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল, আবাসস্থল বিলুপ্ত হওয়া এবং সর্বত্রই মানুষের উপস্থিতির কারণে পাখির বিচরণ কমে গেছে।
প্রকৃতি রক্ষায় পাখিকুলকে ফিরিয়ে আনতে হবে, যোগ করেন তিনি।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বকের বৈজ্ঞানিক নাম (Ardea alba), (ইংরেজি: EGRET) বক মূলত ওয়াক, রাতচরা, বাজকা বা চক্রবাক আরডেইডি (Ardeidae) পরিবারের অন্তর্গত মাঝারি আকৃতির অত্যন্ত সুলভ প্রজাতির পাখি।
বাংলাদেশে প্রায় ১৮ প্রজাতির বক রয়েছে। এর মধ্যে বক নয়টি, বগা পাঁচটি এবং বগলা চারটি। বকের মধ্যে রয়েছে ধুপনি বক, দৈত্য বক, চীনা কানি বক, দেশি কানি বক, কালামাথা নিশি বক, মালয়ী নিশি বক, ধলপেট বক, লালচে এবং খুদে সবুজ বক।
এরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ ভূমিকা রাখছে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন ও অর্থনীতিতে। মাছ ছাড়াও এসব পাখি শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও জলজ পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে থাকে। ওদের খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জাহান বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধভাবে পাখি শিকার করলে দুই বছরের সাজার বিধান রয়েছে। যারা আইন অমান্য করে পাখি শিকার করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এসআই