গত বছরের ১ ডিসেম্বর বনানীর নর্দান ক্যাফে থেকে বের হওয়ার সময় নিখোঁজ হন চার তরুণ।
নিখোঁজ হওয়া চার তরুণ হলেণ- সাফায়েত হোসেন (২৪), মো. মেহেদী হাসান (২৫), মো. সুজন (২৫) ও জায়েন হোসেন খান পাভেল (২৫)।
এদের মধ্যে সাফায়েত ও জায়েন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মেহেদী বরিশালের বিএম কলেজের ছাত্র। আর সুজন ড্যাফোডিল আইটি থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে কোর্স করে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
জিডি করার পর পুলিশ ওই ক্যাফের সিসিটিভি ফুটেজে দেখেন, তারা চারজনই নর্দান ক্যাফেতে এক টেবিলে বসে একসঙ্গে খেয়েছেন এবং আড্ডা দিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কিছুক্ষণ পরপর উঠে টয়লেটের সামনে গিয়ে ফোনে কথা বলছিলেন এবং এসএমএস দিচ্ছিলেন। তাদের মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা যায়, বনানীর কাঁচাবাজারের পাশে একসঙ্গে চারজনের মোবাইলফোন বন্ধ হয়ে যায়।
নিখোঁজদের স্বজনদের ভাষ্য, জিডির কপি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন কিন্তু কেউই কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। অপরদিকে পুলিশ বলছে, পুলিশ ও গোয়েন্দারা নিখোঁজদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
নিখোঁজ সাফায়েত হোসেনের বাবা মো. আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই একমাস সাতদিন হল, ছেলেটা কোথায় আছে কার কাছে আছে কোন খবর নেই। জিডির কপি নিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরলাম এখনো কেউ বলতে পারলোনা ছেলেটা কোথায়?
‘যদি জানতে পারতাম যে ছেলেটা কোথায় আছে তাহলেও একটু শান্তি পেতাম, এখন আমরা দিশেহারা’ যোগ করেন তিনি।
সাফায়াতের ছোট বোন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থী। চলতি মাসেই তার পরীক্ষা। সাফায়েত তাকে নিয়মিত কোচিংয়ে আনা-নেওয়া করতো এবং পড়া দেখিয়ে দিত। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর দুঃখে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন বাবা আলী হোসেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, আমরাতো বাংলাদেশের নাগরিক। ছেলেটাকে একমাসের বেশি সময় ধরে খুঁজে পাচ্ছি না, এখন আমরা কোথায় যাবো?
ঘটনার দিনের বর্ননা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সাফায়েত ও পাভেল ৭ম শ্রেণি থেকেই বন্ধু। তারা প্রায়ই একসঙ্গে চা-কফি খেতে বাইরে বের হতো। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সে বন্ধু পাভেলকে সঙ্গে নিয়ে এশার নামাজ আদায় করতে বনানী মসজিদে যায়। রাত আটটা ২৩ মিনিটে সাফায়েত তার মায়ের সঙ্গে বলে সাড়ে আটটার মধ্যে বাসায় আসছি। কিন্তু এরপর থেকে তার ফেনটি আর খোলা পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে পাভেলেরও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নিখোঁজ মেহেদী হাসানের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, তাদের সম্পর্কে এখনো কোন তথ্যই পাইনি। পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। কারে কী বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলেটা কোথায় আছে একমাত্র উপরওয়ালা জানেন।
তিনি আরো বলেন, আমি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজেই চলতে পারছি না। তার মধ্যেও অনেক দৌঁড়াদৌঁড়ি করেও ছেলেটা কোথায় আছে এখনো জানতে পারলাম না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বনানীতে যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদেরকে খুঁজে পেতে পরিবারের সঙ্গে পুলিশও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো তাদের ট্রেস করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা পুলিশও তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
এই চারজন জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়েছেন নাকি অপহৃত হয়েছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, এর আগে আমরা দেখেছি যারা নিখোঁজ হয়েছেন তারা অনেকে অপহৃত হয়েছেন আবার অনেকে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন। এটা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে, এখন পরিষ্কার কিছু বলা যাচ্ছে না।
‘পুলিশ তাদেরকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করতে পারে’ এমন সন্দেহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিএমপি কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে থাকলে আইনগত বিধিবিধান অনুসরণ করে আসামিদেরকে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৬
পিএম/বিএস