ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জীর্ণ কুটিরে ভালোবাসায় সিক্ত গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
জীর্ণ কুটিরে ভালোবাসায় সিক্ত গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি জীর্ণ কুটিরে ভালোবাসায় সিক্ত গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি

সিরাজগঞ্জ: নিজের জরাজীর্ণ কুটিরে হাজার হাজার গ্রামবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হলো সদ্য সমাপ্ত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি আকতার।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাড়কোলা গ্রামের বাড়িতে এলে তার বাবা তাঁত শ্রমিক আকতার হোসেন ও মা নাছিমা বেগম তাকে পরম স্নেহে বুকে জড়িয়ে নেন।  

আঁখির আসার খবর পেয়ে গ্রামবাসী, সহপাঠী, স্কুল শিক্ষক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান।

সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে আঁখি। তার এ অসামান্য কৃতিত্বে গ্রামবাসী উচ্ছ্বসিত।

বাড়ির পৌঁছানোর আগে পাড়কোলা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পাড়কোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরে আঁখি। তাকে এক নজর দেখার জন্য উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। এসময় গ্রামবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সে।  

সদ্য সমাপ্ত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলার বাঘিনীরা। এ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে গোল্ডেন বুট লাভ করে আঁখি।

আঁখির ভাষায়, গ্রামবাসীর ভালোবাসায় দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি ভুলে গেছি। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রামে থাকবো। একদিন বাড়িতে বিশ্রাম শেষে ফুটবল খেলতে আগ্রহী মেয়েদের অনুশীলন করাবো। আমার বিশ্বাস, এতে আরো সম্ভাবনাময় ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি হবে।  

আঁখির বাবা আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেড় শতক জমিতে টিনের জরাজীর্ণ ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। তাঁত শ্রমিকের কাজ করে যে আয় হয় তা দিয়ে চলে আমাদের চারজনের সংসার। আঁখিই আমার ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো।

তিনি জানান, আঁখির মা নাছিমা বেগমও চরকায় সূতার কাজ করেন। এতে কোনো মতে দুই বেলা খাবার জুটলেও ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ চালানো সম্ভব হয় না। তাই তারা মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। জীর্ণ কুটিরে ভালোবাসায় সিক্ত গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখিআঁখির বড় ভাই কলেজছাত্র নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আঁখি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই স্কুলশিক্ষক মনছুর রহমানের অনুপ্রেরণায় শাহজাদপুরে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল টিমে নাম লেখায়। সে থেকেই তার ফুটবল খেলা শুরু।

সে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ফুটবল খেলায় রাজশাহী বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ২০১৬ সালে আঁখি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) সুযোগ পেয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভুটান, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, তাজিকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকেও দুইবার পুরস্কার গ্রহণ করে সে। এছাড়া সে স্বর্ণপদক লাভ করে থাইল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল খেলা থেকেও।  

স্কুলশিক্ষক মনছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আঁখি বাংলাদেশের গর্ব, শাহজাদপুরবাসীর অহংকার। সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার সাফল্যে এলাকার সবাই আনন্দিত।

৩১ ডিসেম্বর আঁখিকে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সংগঠন পূরবী থিয়েটার, শিশু সংগঠন ভোরহলো ও যুগান্তর স্বজন সমাবেশ শাহজাদপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।