ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৈত্রী সেতুতে পাল্টে যাবে দুই বাংলার পাহাড়ি জনপদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
মৈত্রী সেতুতে পাল্টে যাবে দুই বাংলার পাহাড়ি জনপদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে: ভারতের পাহাড়ি জনপদ ত্রিপুরার সাব্রুম ও বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড়ের সাব্রুম সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে দু’দেশের সরকার। স্থানীয়রা মনে করছেন এ ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হলে রামগড় স্থল বন্দরের কাজও তরান্বিত হবে।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে এ ট্রানজিট সেতুটির কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
 
এ উপলক্ষে দুপুরে রামগড় পৌরসভা মিলনায়তনে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উঠে আসে মৈত্রী সেতুটির গুরুত্বের নানা দিক। বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাহাড়ি দু’জনপদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে, পাল্টে যাবে জীবন যাপনের দৃশ্যপট।
 
ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ফেনী নদীর ওপর প্রস্তাবিত এ ব্রিজ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে এ সংযোগ ত্রিপুরার মানুষের অনেক দিনের দাবি। ব্রিজটি দু’দেশের মানুষের মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও ভ্রমণ ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতুটি যেমন ত্রিপুরাবাসীর জন্য গুরুত্বের তেমনিভাবে সমান গুরুত্বের বাংলাদেশের জন্যও।

তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে দু’দেশের মধ্যে কিছু চাহিদার আদান-প্রদান সম্পন্ন হবে। আশা করা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে এবং ২০১৯ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। ব্রিজটির কাজ শেষ হলে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাভলম্বী হবে এ অঞ্চলের মানুষ, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামগড় ও সাব্রুম সীমান্তে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ ও ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের এ ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮.৬৯ কোটি ভারতীয় রূপি। ব্রিজটির প্রধান নদী স্পান রয়েছে ৮০ মিটার, উভয়পাশের স্পান রয়েছে ১০০ মিটার এবং অভিমুখ দৈর্ঘ্য ২৮৯ মিটার। পুরো নির্মাণ ব্যয় ভারত সরকার দেয়ার কথা রয়েছে।      

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে ফেনী নদীর ওপর রামগড়-সাব্রুম মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
 
এদিকে, বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত পিলার নম্বর ২২১৫ থেকে ৪ আর-বি এলাকাটি পরিদর্শন করে মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ বিষয়ে ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ বাংলাদেশ-ভারত উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণ শেষে রামগড় পৌরসভায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে বন্দর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা এবং ভারতীয় অর্থায়নে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মূল সেতু এবং সংযোগ সড়কসহ ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণের কথা ছিল। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখনো শুরু হয়নি রামগড় স্থল বন্দরের কাজ। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমঅপরদিকে সীমান্তের ওপারে সাব্রুমে স্থানীয় সাংবাদিক বন্ধন দাস মোবাইল ফোনে জানান, স্থল বন্দর নির্মাণ কার্যক্রম সাব্রুম শহরে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে স্থল বন্দরের সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ আগরতলা থেকে সাব্রুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ অনেকটাই শেষ করেছে ভারত সরকার।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগড় থানা ঘাট মহামুনি এলাকায় সীমান্ত পিলার দেওয়া ছাড়া এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয়রা বাংলাদেশ অংশে রামগড় স্থল বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে বন্দরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, মৈত্রী সেতু নির্মাণ হচ্ছে রামগড় স্থল বন্দর নির্মাণও এ এলাকার মানুষের দাবি। রামগড় তথা পার্বত্যবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি এ বন্দর।

তারা জানান, রামগড় স্থল বন্দর পুরোদমে চালু হলে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নব দিগন্তের সূচনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এসএইচডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।