ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশে থাকতেই শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা চান রোহিঙ্গারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৮
বাংলাদেশে থাকতেই শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা চান রোহিঙ্গারা গত বছরের ২৫ আগস্টের পর শুরু হয় বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা ঢল। ছবি: বাংলানিউজ আর্কাইভ

কক্সবাজার: ‘আমরা কেন এক ক্যাম্প থেকে গিয়ে আরেক ক্যাম্পে থাকবো? আকিয়াব ক্যাম্পে যেসব রোহিঙ্গা আছে, আমরা বাংলাদেশে থাকতেই যদি তাদের বাড়ি ভিটায় পৌঁছে দেওয়া হয়, রোহিঙ্গা হিসাবে মেনে নেওয়া হয়, তাহলে আমরা ফিরে যাবো। কিন্তু আমরা এখান থেকে গিয়ে ক্যাম্পে থাকতে চাই না।’

বলছিলেন রাখাইন থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত কক্সবাজারের উখিয়ার উনচিপ্রাং ক্যাম্পে অবস্থান নেওয়া মো. আমান উল্লাহ। তিনি এখন ওই ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হেড মাঝি।

 

শুধু আমান উল্লাহ নন, রোহিঙ্গা নেতা হাজী শফি উল্লাহসহ আরও অনেকের বক্তব্যই এমন। শফি বললেন এভাবে, আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য বার্মা (মিয়ানমার) সরকার যে বাংলাদেশে এসেছে এর জন্য আমরা খুব খুশি।  

‘কিন্তু যাওয়ার আগে নাগরিকত্ব দিলে আমরা যেতে রাজি আছি, না দিলে নয়। ’

তিনি বলেন, আমরা সেখানে যেভাবে নির্যাতন সহ্য করেছি, সব অধিকার পূরণ না হলে যাওয়াটা আমাদের জন্য নিরাপদ হবে না।

পড়ুন>> প্রথম দফায় দুই হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার

তারা বলছেন, মিয়ানমারে ফিরতে হলে তাদের ছয় দফা দাবি পূরণ করতে হবে। আর বাংলাদেশে থাকতেই দাবি পূরণের নিশ্চয়তা চান রোহিঙ্গা নেতারা।  

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা।  ছবি: বাংলানিউজরোহিঙ্গাদের ছয় দফা হচ্ছে- তাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্ব দিতে হবে, জমিজমা ফেরত দিতে হবে, রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিচার হতে হবে, অস্থায়ী ক্যাম্পে নয়, তাদের নিজ বাড়ি-ভিটায় নিয়ে যেতে হবে, রাখাইনে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং সর্বশেষ এসব দাবি যে তারা মেনে নিবে তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে এসে বলতে হবে।

গত ৩১ অক্টোবর (বুধবার) বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলেও এসব দাবি তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গারা।

তবে তাদের এসব দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দেননি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব উ মিন্ট থো। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের দেওয়া দাবিগুলো মিয়ানমার সরকারের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি বাকি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

এর আগে ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গাদের নানা সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়ে কথা বলেন মিন্ট থো।  
ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম, ছেনুয়ারা বেগম, জোহরা খাতুন, মো. ইউসুফসহ আরো কয়েকজন তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবি তুলেন।

উনচিপ্রাং ক্যাম্পের ইউসুফ মাঝি বলেন, মিয়ারমারে গিয়ে এনভিসি কার্ড (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) নেওয়া ও ক্যাম্পে থাকার বিষয়টি খুবই অবমাননাকর এবং এতে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।  

তিনি বলেন, যে অধিকারের জন্য আমরা আজ, ধন দৌলত, মা-বাবা হারিয়ে বাংলাদেশে এসে ত্রিপলের নিচে জীবন-যাপন করছি। আমাদের (মিয়ানমার) সরকার যদি সেসব অধিকার দিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমরা চলে যাবো। ফেরত নিয়ে যে অধিকার ফিরিয়ে দেবে এর নিশ্চয়তা কী?

‘আমাদের নিয়ে যাবে সেটা বিশ্বাস করবো তখন, যখন মিয়ানমারে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিবে,’ বলেন লম্বাশিয়ার জোহরা খাতুন।  

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কুতুপালং-১ ক্যাম্পের সেকুফারও একই কথা, ‘নিয়ে যেতে হলে আমাদের অধিকার, নাগরিকত্ব, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি এবং আমাদের যে নির্যাতন করেছে এসবের বিচার হতে হবে। বিচার না হলে আমরা যাবো না। ’

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছর ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফেরাতে গত বছর ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই হয়।  

এ চুক্তি অনুসারে, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও এক বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এ অবস্থায় প্রত্যাবাসনের জন্য গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকায় আসে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল।  

মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক হয়। পরদিন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যায় প্রতিনিধি দলটি।  

সেখানেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, চলতি মাসের (নভেম্বর) মাঝামাঝি সময়ে প্রথম দফায় দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হবে।  

তবে ঘোষণা দেওয়ার পরেও প্রত্যাবাসন হবে কি-না তা নিয়ে জোর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গা নেতারা। কারণ এ পর্যন্ত শুধু কথা দিলেও তা রাখছে না সু চির সরকার।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।