দূর থেকেই এই বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ের এমন রুগ্ন দশা খোলা চোখেই ধরা পড়ে। আর ভেতরের অবস্থা তো আরও করুণ।
তার জরাজীর্ণ ছোট্ট কক্ষে মাস দুয়েক আগে ছাদের পলেস্তারা খসে মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছেন। এখনো নিত্যদিনই আতঙ্ক নিয়েই কক্ষটিতে বসতে হচ্ছে তাকে।
বাহিনীটির অফিসের ভেতরের হাজতখানা থেকে শুরু করে সিপাহী, নায়েক ও হাবিলদারদের কক্ষেরও ভগ্নদশা। মাথার ওপর ছাদের পলেস্তারা ও চুনকাম খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে রড। এখানে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনার মতো সুযোগ-সুবিধাও অপ্রতুল। তবু ঝুঁকিপূর্ণ এমন কক্ষেই দিন-রাত কর্মকর্তাদের!
ময়মনসিংহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকির ভবনেরই মতোই শোচনীয় অবস্থা স্টেশনের ভেতরকার ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ফাঁড়ি’র। বৃষ্টি হলেই এখানে ছাদ চুয়ে পড়ে পানি!
এই ফাঁড়ির কক্ষটির দেয়াল ভীষণ স্যাঁতস্যাতে। গোটা কক্ষের এখানে-সেখানে জাল বুনেছে মাকড়শা। এক কথায় অপরিচ্ছন্ন এক পরিবেশ।
ডিজিটালাইজেশনের এই যুগেও রেলের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি জিআরপি’র মতোই অপরাধ দমন ও গ্রেফতারে দায়িত্বে থাকা ময়মনসিংহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) এমন জীর্ণ দশাই বলে দিচ্ছে এখনো কতখানি অবহেলিত তারা।
১৯২২ সালে রেলের নিজস্ব বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এর নাম পরিবর্তন হয়ে রাখা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। এমনিতে নিরাপত্তা টহলে সিপাহী ও হাবিলদারদের একটি ‘লাঠি’ সম্বল হলেও রেলের সম্পদ রক্ষা বা নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের আগ্নেয়াস্ত্রও দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়মনসিংহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে প্রায় ৫৫ জন সদস্য রয়েছেন। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও জামালপুর জেলা মিলিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে প্রতি শিফটে ৫ জন করে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), হাবিলদার ও সিপাহী দায়িত্বে থাকেন।
স্টেশনের ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ফাঁড়ি’র কক্ষে গিয়ে দেখা গেলো, মাত্র দু’টি টেবিল ও সাকুল্যে চারটি চেয়ার নিয়ে বসে আছেন পুলিশের মতোই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদ মর্যাদার আরিফুল ইসলাম। তার ঠিক পেছনেই ফাইলপত্র রাখার জন্য একটি র্যাগ। সেটিও ধুলোবালিতে পরিপূর্ণ।
দেয়ালে সাঁটানো নোটিশ বোর্ডটিরও যেন ‘ত্রাহি’ অবস্থা। ২০১৭ সালের নোটিশ ঝুলছে ২০১৮ সালের শেষে এসেও। একদা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় ব্যবহৃত ‘কাঠগড়া’ও পড়ে আছে।
আক্ষেপ করে সিপাহী জয়নাল আবেদিন বলছিলেন, ‘একটি থানার মতোই আমাদের কার্যক্রম চলে। তবে কোনো অভিযান পরিচালনা করে আসামি আনা নেওয়ার জন্য আমাদের একটি পিকআপও নেই। নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই সব করতে হয়। ’
সিপাহী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুরাতন ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওসি স্যার থেকে শুরু করে আমরা দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু এই জীর্ণ দশা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। ’
সিপাহী তাইজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘চৌকির কক্ষের ভেতরকার বৈদ্যুতিক স্টিক লাইট অনেক দিন ধরেই নষ্ট। ইলেকট্রিক ফোরম্যান ঠিক করে দিলেও বেশিদিন যায় না। আসলে প্রতিটি দেয়ালই বেশ স্যাঁতস্যাতে। ’
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী’র (আরএনবি) ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) ফিরোজ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত চিঠি লিখে যাচ্ছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। সংশ্লিষ্টরা ভবনটি সংস্কারেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে সর্বশেষ ক’দিন আগে শুনেছি এসব ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
এমএএএম/এইচএ/