এদিন সকাল থেকে ঠাণ্ডা বাতাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পথের ধারে থাকা ছিন্নমূল মানুষগুলো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে।
তীব্র শীতে কৃষিতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। বিশেষ করে কৃষকের মাঠে থাকা আলুর ফসলে লেট ব্লাইট (পচন রোগ) ছড়িয়ে পড়েছে। আর বোরো খেতের বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইনজুরি। ফলে সাধারণ কৃষকরা এখনই দুশ্চিন্তা পড়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই আলু খেতে লেট ব্লাইট দেখা দেয়। এজন্য এ সময় কৃষকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ সময় থানা বা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে হবে। সমস্যা দেখা দিলে আলু খেতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করারও পরামর্শ দেন তিনি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, শনিবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ এবং বিকেল ৫টায় ৬০ শতাংশ। এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০ ডিসেম্বর রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ১৯ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, গত কয়েক দিন থেকেই তাপমাত্রা কমছে। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ অবস্থার উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে রাতে কুয়াশা বাড়তে শুরু করলে দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
কিন্তু দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেই অবস্থান করবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে রাজশাহী ও আশপাশের জেলার ওপর দিয়ে। এ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে বলে জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
ফলে কনকনে ঠাণ্ডায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে রাজশাহীর জনজীব। হিমালয় ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাড় কাঁপানো শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তবে শীত বাড়লেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ শুরু হয়। তবে বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজশাহীর চর ও গ্রামাঞ্চলেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এসব এলাকার মানুষগুলোকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যাচ্ছে।
রাজশাহী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, এরই মধ্যে রাজশাহীর নয় উপজেলার জন্য ৩৭ হাজার ৮০০ কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার কম্বল। তবে নির্বাচনের কারণে এগুলো এখনও বিতরণ শুরু হয়। নির্বাচন শেষ হওয়া মাত্র কম্বলগুলো শীতার্তদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
এসএস/এসএইচ