ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হুমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
হুমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা পুলিশের হাতে আটক ঘাতক মোলায়েম হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর: ‘পাওনা টাকা চাইলেই ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিতেন আফরোজা খাতুন। বারবার হুমকি দেওয়ায় বাধ্য হয়েই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মোলায়েম। পেশায় একজন ভ্যানচালক হলেও ঠাণ্ডা মাথায় ওই নারীকে শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হননি তিনি। খুনের পর কল্পকাহিনীও তৈরি করেছেন নিখুঁতভাবে।’

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মহিষাখোলা গ্রামে মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী আফরোজা খাতুন হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মোলায়েম হোসেন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মেহেরপুর আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট তারিখ হাসানের কাছে ১৬৪ ধারায় এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জবানবন্দি দেন ঘাতক মোলায়েম হোসেন।

 

জবানবন্দিতে মোলায়েম জানান, আফরোজা খাতুনের স্বামী পিরতলা গ্রামের শিপন আলী চার বছর আগে মালয়েশিয়াতে যান। যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে আফরোজা খাতুন ৪৫ হাজার টাকা ধার নেন। স্বামী শিপন বিদেশ যাওয়ার পর সেই ধারের টাকা পরিশোধ করেও দেন। পরে আবারও ৩০ হাজার টাকা ধার নেন নিহত আফরোজা। সেই ধারের টাকা পরিশোধ করলেও বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ২৮ হাজার টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করেন তিনি। পরে তার স্বামীর দুলাভাইয়ের ধারের টাকা পরিশোধ করার জন্য আবারও ৫০ হাজার টাকা মোলায়েমের কাছে ধার চান তিনি। তাকে টাকা ধার না দিতে চাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনে মোলায়েমের বাড়িতে এসে আত্মহত্যার হুমকি দেন আফরোজা।  

আত্মসম্মানের ভয়ে তখন আফরোজাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে জবানবন্দিতে জানান মোলায়েম।  

জবানবন্দিতে মোলায়েম আরও জানান, ২৪ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ৩০ হাজার টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে মাঠের মধ্যে ডেকে নিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আফরোজাকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেন তিনি।
 
আফরোজা এলাকার বিভিন্ন এনজিও ও বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার নেন বলেও জানান মোলায়েম হোসেন।
 
ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামেন। এর মধ্যে সুদ ও ধার দেনার টাকা পয়সা, ভিকটিমের পরকীয়া ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ।
 
তবে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলফোনের কললিস্ট চেক করার পরেই মোলায়েমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেজন্য তাকে ২৫ ডিসেম্বর বিকেলে বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে আনা হয়।
 
মোলায়েমকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি উল্লেখ করে ওসি ওবাইদুর রহমান বলেন, তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে নিখুঁতভাবে গল্প সাজিয়ে বেশ কিছু মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। প্রথমে জমি নিয়ে শত্রুতা থাকায় ভিকটিমের ভাতিজা বানারুল ইসলাম ও পরে তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করতে চেয়ে এলাকার মজিবুল ইসলাম, লিটন হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম নামে তিন যুবককে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র ব্যক্তি বলে স্বীকারোক্তি দেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মহিষাখোলা গ্রামের হাউস আলীর মেয়ে ও একই উপজেলার পিরতলা গ্রামের মালেশিয়া প্রবাসী শিপন আলীর স্ত্রী আফরোজ খাতুনের মরদেহ গ্রামের আজাদ বকসের পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সাহারুল ইসলাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
এবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।