গাজীপুর: টিভিতে-খবরের কাগজে আবরার হত্যার ঘটনা শিরোনাম হতে দেখেছি। আমার ভাইও যে, আবরারের মতো খবরের শিরোনাম হবে কখনো ভাবিনি, কল্পনা করতেও পারিনি।
রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিহত জ্যেষ্ঠ সহাকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমের বোন উম্মে সালমা সাথী কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব বলেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ওয়াশরুমে নেওয়ার কথা বলে আমার ভাইকে হাসপাতালের দোতলায় মেঝেতে ফেলে ৮/১০ জন নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের এমন কী অপরাধ ছিল যে, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করতে হবে? এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।
বুধবার (১১ নভেম্বর) গাজীপুরে এএসপি আনিসুলের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পুত্রকে হারানোর শোকে নিহতের বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। স্ত্রী ও ভাই-বোনেরা কান্না করছেন। তাদের কান্নায় আশেপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আনিসুলের স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাবাকে না পেয়ে নিহত আনিসুল করিমের চার বছরের একমাত্র ছেলে সাফরান করিম স্বজনদের জড়িয়ে কান্না করছে। তার কান্না দেখে নিহতের বোন ও ভাইরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কোনো সান্ত্বনাতেই তাদের কান্না থামছে না।
বরিশাল মেটোপলিটন পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে গত দুই দিন ধরে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসী নিহতের গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকার বাসায় ভিড় জমাতে থাকেন। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ওই এলাকার বাতাস।
নিহতের বড় ভাই রেজাউল করিম জানান, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আনিসুল করিম। বাবা ফায়জুর আহমেদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের আড়াল গ্রামে তাদের গ্রামের বাড়ি। তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরুদা এলাকায় প্রায় ৪০ বছর যাবত বসবাস করছেন তারা।
জেলা শহরের রানী বিলাস মনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পাস করেন আনিসুল করিম। তিনি কাজী আজিম উদ্দীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৩তম ব্যাচে লেখাপড়া করে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। আনিসুল করিম ছিলেন মেধাবী ও সদালাপি। তিনি ৩১তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন।
২০১১ সালে আনিসুল করিম শিপন বিয়ে করেন শারমিন সুলতানাকে। এ দম্পতির চার বছর বয়সী সাফরান করিম নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। আনিসুল করিম খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন। মানসিকভাবে অনেক চাপ নিলেও তিনি কখনো কাউকে কিছু বলতেন না। গত কয়েকদিন ধরে তার কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
গত সোমবার তাকে ঢাকার আদাবর এলাকার মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাউন্টারে যখন ভর্তির ফরম পূরণ করা হচ্ছিল তখন কয়েকজন কর্মচারী তাকে টেনে হিঁচড়ে দোতলার একটি রুমে নিয়ে যান। সেখানে তারা তাকে মারধর করেন। কিছুক্ষণ পর তাদের জানানো হয় আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এরপর তাকে দ্রুত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিসুল করিমকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের মেধাবী কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান তার ভাই রেজাউল করিম। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
আরএস/এমজেএফ