ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরের কুড়িল বিলে পলো উৎসব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
নাটোরের কুড়িল বিলে পলো উৎসব পলো ‍ দিয়ে মাছ করছেন শিকারিরা। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হরিদাখলসি কুমিল্লাপাড়া কুড়িল বিলে অনুষ্ঠিত হলো পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসব। এ উৎসবে মেতেছিল আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ।

 

মাছ পেয়ে উল্লাসিত হয়ে ওঠেন শিকারিরা। আর দীর্ঘ এক যুগ পর কুড়িল বিলে দলবদ্ধ এই মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো উৎসুক জনতা। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হরিদাখলসি যুব সংঘ পলো দিয়ে মাছ শিকারের এ উৎসবের আয়োজন করে।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর)  সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে এই মাছ শিকার উৎসব।  

হরিদাখলসি, নশরতপুর, ছাতনী, সমসখলসি, রামশারকাজীপুর, কাটাখালি, বারোঘড়িয়া, বৈদ্যবেলঘড়িয়া, বানুরভাগ, তেঘরপাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ পলো দিয়ে মাছ শিকারে অংশ নেন। মাথায় ও কোমরে গামছা বেঁধে বিলের পানিতে নেমে পড়েন তারা। রুই, কাতলা, জাপানি, বোয়াল মাছ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হন আগত এসব মৎস্য শিকারিরা।

হরিদাখলসী গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক ও পল্লী চিকিৎসক মো. লিটন বাংলানিউজকে জানান, এই কুড়িল বিলে বন্যার পানি প্রবেশ করে না। বর্ষাকাল এলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর এই বিলের ধারের পুকুর ভেসে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। এতে একদিকে পুকুর থেকে মাছ প্রবেশ করে অপরদিকে প্রকৃতিগত ভাবেও মাছের উৎপাদন হয়। এই দুই মিলেই মাছে ভরপুর হয়ে ওঠে কুড়িল বিল। আগে প্রতিবছরই দিন নির্ধারণ করে এই বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসব হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই বিলে পানি না জমায় মাছের উৎপাদন যেমন হয়নি, তেমনি পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসবও পালন হয়নি। তবে এ বছর বিলে পানি হওয়ায় স্থানীয় একটি সংগঠন এই পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসবের আয়োজন করেন। এতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন পর আবহমান গ্রাম-বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব দেখতে পেল। এজন্য গ্রামবাসী বেশ খুশি।

মাছ শিকার করতে আসা নশরতপুর গ্রামের বাবলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন পর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতে অনেক আনন্দ লেগেছে। তিনি পলো ব্যবহার করে দুই ঘণ্টায় দুইটি রুই, একটি কাতলা ও একটি জাপানি মাছ পেয়েছেন।  

ছাতনী গ্রামের মাহবুর রহমান, খলিল মণ্ডল জানান, পলো দিয়ে মাছ ধরার খবর পেয়ে তাদের গ্রাম থেকে অন্তত ৫০ জন মাছ শিকারি এসেছিলেন এই কুড়িল বিলে। তারা সবাই কমবেশি মাছ পেয়েছেন। আগে হরহামেশাই পলো দিয়ে মাছ ধরা হতো। প্রতি বছর এ সময় এলেই পলো দিয়ে মাছ শিকারের জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। মাঝখানে কয়েক বছর ধরে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব প্রায় বিলুপ্তির পথে ছিল। আজ অনেকদিন পর পলো দিয়ে মাছ শিকারের এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল আমরা আবারও আগের দিন ফিরে গেছি।  

নলডাঙ্গা উপজেলার হরিদাখলসী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুব সংঘের সভাপতি মো. জামিল হায়দার জনি বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘ ১২ বছর এই বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব হয়নি। তাই গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে তারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবছর তারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানান।

নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য অফিসার সঞ্জয় কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন আর দিনদিন পরিবেশ ও আবহাওয়ার কারণে নদী-নালা খাল বিলের তলদেশ অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি হ্রাস পাওয়ায় এবং অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও নদী খাল দখল করায় পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে ভাটা পড়ে। তবে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান হারে মাছের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় খাল-বিলে আবারো মাঝে মধ্যেই পলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে প্রতিবছর স্থানীয়দের উদ্যোগ নিতে হবে।     

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।