নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সরকারি চাহিদাপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন স্থানীয় এমপি। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলাজনিত জটিলতার কারনে গত ৯ বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না পৌরসভায়। ফলে বিনা ভোটেই টানা ১৬ বছর ধরে পৌরসভার প্রধান দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনিই প্রশাসক, চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় একদিকে সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে না। অন্যদিকে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে পৌরসভার উন্নয়নেও নেই কোন গতি। ফলে পৌরসভার উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনেও পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রনালী নিষ্কাশনসহ কোন সুবিধা মিলছে না।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালের ২৬ জুলাই প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান মোশাররফ হোসেন। ২০০৬ সালে প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিবার্চিত হন। এরপর ২০০৮ সালে পদবী পরিবর্তন হয়ে মেয়র হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পৌরসভার চেয়ারে তিনি রয়েছেন একটানা প্রায় ১৬ বছর ধরে। ২০০৬ সালে নির্বাচনের পর ২০১১ সালে তার মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় মেয়র হিসেবে এখনও তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরের মালঞ্চি বাজার কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান অভিযোগের সুরে বলেন, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মালঞ্চি বাজারের কোন উন্নতি হয়নি। উপরুন্তু পশু বাজার অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কোন উন্নয়ন হয়নি। অথচ ২০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সের ফিস এখন এক হাজার ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
পৌর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায়, সাদেকুর রহমান ও মাহমুদ সুলতান জানান, ২০০৪ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা মোশাররফ হোসেন প্রথমে প্রশাসক, পরে চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রায় ১৬ বছরে পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। পানি নিষ্কাশনে নেই কোন ড্রেন। নেই সড়ক বাতি ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। রাস্তাঘাটেরও কোন উন্নয়ন নেই।
তারা অভিযোগ করে বলেন, তিনি অফিসে আসেন না। মাসের ২৫ দিনই ঢাকায় থাকেন। মেয়র মোশাররফ নিজের লোকদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাদের দিয়ে মামলা করে নির্বাচন আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছেন। ধরেই নিয়েছেন তিনি আজীবন চেয়ারম্যান থাকবেন।
তবে মেয়র মোশাররফ হোসেন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তৎকালীন সাংসদ আবু তালহা বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দেন। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করেন। ২০১০ সালে হাইকোর্টে মামলাটি দাখিল করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। তবে আমিও চাই নির্বাচন হোক।
নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. গোলাম রাব্বী বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাগাতিপাড়া পৌরসভায় ২০০৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে মেয়াদ শেষ হলেও মহামান্য হাইকোর্টে মামলার কারণে এই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
গোলাম রাব্বী জানান, সারাদেশে পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আলোকে নাটোর জেলার সব পৌরসভার তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী বাগাতিপাড়াসহ জেলার সব পৌরসভার তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে। বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচন হওয়ার উপযোগী এবং আইনকানুন ও বিধি মেনে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও জনৈক ব্যক্তি বাগাতিপাড়া পৌরসভাটি আইনগতভাবে চলবে কি চলবে না, তার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সেখানে নির্বাচন বন্ধ আছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ বাগাতিপাড়া পৌরসভার বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা রিটের আইনগত দিকসহ কী প্রতিকার চাওয়া হয়েছে, সেই বিষয়গুলোসহ বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে আমাদের মতামত পাঠিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
এইচএমএস/