সিরাজগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান রয়েছে আমাদের।
রোববার (২৯ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এ সময় রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় এখানে সেতু করার ব্যাপারে আমাকে অনেক তর্ক করতে হয়েছে, অনেক দেনদরবার করতে হয়েছে। আজকে একটা আলাদা সেতু হয়ে যাচ্ছে। এতে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। এই রেলসেতু নির্মাণ হলে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারব। দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে সরকার নৌ, রেল ও আকাশপথের সার্বিক উন্নয়নে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন। আর সেই সেতুবন্ধন করতে গেলে আমাদের ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ করতে হবে।
ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এই দুটোর সঙ্গে যদি আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা কখনও চিন্তা করেনি। তাদের কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। তারা নিজেদের সম্পদ গড়ার কাজে ব্যস্ত ছিল। তারা রেলকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। ১০ হাজার রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারীকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেওয়া হয়েছিল। রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে আবারও রেল যোগাযোগের উন্নয়নে কাজ করি। বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে রেলসেতু নির্মাণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আবারও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে রেললাইন সংকোচন শুরু করে। তারা রেলকে প্রায় গলাটিপে হত্যা করেছিল। আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সারাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছি। নতুন রেল নিয়ে আসি। তবে অগ্নিসন্ত্রাসের নামে বিএনপি-জামায়াত সবচেয়ে বড় আঘাতটা হানে এই রেলের উপরেই।
জাপানকে অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাপানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশেষভাবে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই জাপান সরকারকে। তারা সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি সেটা করব। কারণ জাপানের মতো বন্ধু যাদের সঙ্গে আছে তাদের আর চিন্তার কিছু নাই, সেটা আমি বলতে পারি।
সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে আয়োজিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এতে বক্তব্য রাখেন রেল সচিব সেলিম রেজা। উপস্থিত ছিলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত, ডা. আব্দুল আজিজ, আব্দুল মমিন মণ্ডল, তানভীর ইমাম, শামসুল হক টুকু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদসহ রেল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা ও জনপ্রতিনিধি।
অপরদিকে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি প্রমুখ।
রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে ডাবল লেনের ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতু। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাইকা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে সেতুর। এই সেতু দিয়ে ১০০ কিলোমিটার বেগে একইসঙ্গে দুটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি সব ধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ ডেডিকেডেট ডুয়েল গেজ রেল সেতু।
** বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
আরএ