নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গায় অরুণ শর্মা নামে এক সার ব্যবসায়ীর হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও শোক সভা করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১০টার সময় নলডাঙ্গা বাজারে ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও শোক সভা পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম পিয়াস, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মো. সাহেব আলী, নলডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন হক, সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির, ব্যবসায়ী ইয়াসিন উর রহমান, আনিসুর রহমান, আমিনুল ইসলাম হাদু, শরিফ হোসেন প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা ব্যবসায়ী অরুণ শর্মার হত্যাকারী গ্রেফতার হওয়া কলেজছাত্র আল আমিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
একই সঙ্গে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ চুরি, ছিনতাই ও অনলাইন জুয়া বন্ধ এবং মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া ব্যবসায়ী অরুণ শর্মা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
গত ২১ নভেম্বর (শনিবার) দিনগত রাত ৯টার সময় তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নলডাঙ্গা বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে তালতলা এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে তার মাথায় জিআই পাইপ দিয়ে আঘাত করে উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের মো. সাকের আলীর ছেলে রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. আল আমিন (২০)। এতে গুরুতর জখম হন ব্যবসায়ী অরুণ শর্মা। এ সময় আলামিন তার হাতে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে অরুণ শর্মাকে উদ্ধার করে স্থানীয় বিসমিল্লাহ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে রাত দেড়টার সময় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী শ্যামলী শর্মা অজ্ঞাতদের আসামি করে পরের দিন রোববার দিনগত রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, মামলার পর পরই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ও আসামি গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২৮ নভেম্বর) ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার সাহেব বাজার এলাকার বিশাল ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর রুম থেকে আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় ওই রুম থেকে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাসলিমা আক্তার নামে তার প্রেমিকার কাছ থেকে আরো ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আল-আমিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ড ও টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে রোববার (২৯ নভেম্বর) দুপুর দুইটার সময় নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালতে হাজির করা হলে ঘটনার পরিকল্পনা, টাকা ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ওই জবানবন্দিতে আল আমিন আদালতকে বলেন, ঘটনার ছয়-সাত দিন আগে অনলাইন জুয়া খেলায় ২০ হাজার টাকা হেরে যান তিনি। এই টাকা পরিশোধ করতে তার প্রেমিকা তাসলিমা আক্তারের কাছ থেকে ধার নেন। পরে ওই ধারের টাকা কোনোভাবেই প্রেমিকাকে ফেরত দিতে পারছিলেন না।
এ অবস্থায় ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেন তিনি। ছিনতাই করতে গিয়ে তার জিআই পাইপের আঘাতে মারা যান ব্যবসায়ী অরুন শর্মা। পরে ২০ হাজার টাকা তার প্রেমিকাকে ফেরত দিয়েছিলেন। বাকি টাকা নিয়ে রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
আরএ