মানিকগঞ্জ: আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন ও অগ্রাধিকার মূলক পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে গত অর্থ বছরে মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলায় গভীর নলকূপ বসাতে শুরু করেছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কিন্তু নলকূপ বসানোর আগেই জামানতের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে সিংগাইর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে।
জেলার সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গভীর নলকূপ বসাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তথ্যানুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে গভীর নলকূপ স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সুপারিশে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর মানিকগঞ্জ জেলায় আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন ও অগ্রাধিকারমূলক পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় মোট বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপের সংখ্যা দুই হাজার ২৪৪টি। যার মধ্যে বসানো হয়েছে ৮৭১টি। বাকি নলকূপগুলো স্থাপনের কার্যক্রম এখনো চলমান। এছাড়া গত অর্থ বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সিংগাইর উপজেলায় প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের আটকুড়িয়া শিবপুর গ্রামের একাধিক বাড়িতে গিয়ে এ প্রকল্পের গভীর নলকূপ স্থাপনে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্রের দেখা মেলে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের সহায়তায় ওই বাড়িগুলোতে নলকূপ স্থাপনের জন্য সরকার নির্ধারিত ১০ হাজার টাকা ফি না নিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এছাড়া নলকূপ স্থাপনের জন্য শ্রমিকের খাবার বাবদ আরও তিন থেকে চার হাজার টাকা নিয়েছেন ঠিকাদার। নতুন বসানো এসব নলকূপের কোনো কোনোটাতে আবার পানি উঠছে না। গভীর নলকূপের পাইপ বসানো হলেও দেওয়া হয়নি কলসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ। বেশ কয়েকজন গ্রাহক ক্ষোভ ঝাড়লেও স্থানীয় দালাল চক্রের ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
বায়রা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের শ্রীবাস বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আমি জানি না সরকারিভাবে কত টাকা জমা দিতে হয়, আমাদের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরসেদ আলম বললো যে এসব গভীর নলকূপ পেতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। তুমি আমার কাছের মানুষ, তাই তুমি ৩০ হাজার টাকা দিও। তার কথা অনুযায়ী তার হাতে ওই টাকা তুলে দেই।
প্রেমানন্দ নামের আরও এক গ্রাহক বলেন, কয়েকদিন আগে আমার বাড়িতে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, কিন্তু এখনো পানি উঠলো না। কিন্তু টাকা তো ঠিকই নিয়ে চলে গেছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে অভিযোগ করছি, তবু এখনো ঠিক হলো না।
গভীর নলকূপ বসাতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে সুশীল সরকারের স্ত্রী বলেন, ইউপি সদস্যের (মেম্বর) কাছে প্রথম ১৫ হাজার এবং পরে আরও ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি (ইউপি সদস্য) বলেছেন, কারো কাছে বলা যাবে না কত টাকার বিনিময়ে নলকূপ পেয়েছো, নইলে তোমাদের সমস্যা হবে। এ কারণে ভয়ে কারো কাছে কিছু বলিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক গ্রাহক বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সুপারিশে নলকূপ পেয়েছি, এখন টাকা কীভাবে দিতে হয়, তা আমি জানি না। বিষয়টি জানতে সিংগাইর অফিসে গেলে ওই অফিসের শামসুল হক নামে এক স্টাফ আমাকে বলেন, টাকা জমা দিতে হবে ব্যাংকে। কিন্তু এখান থেকে পাস না হলে কাজ হবে না, আর সে জন্য অফিসেই টাকা জমা দিয়েছি ১৫ হাজার।
ইউপি সদস্য ফরসেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমি গভীর নলকূপ স্থাপন তত্ত্বাবধান করছি। কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়, অফিসে এটা এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
মানিকগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ফাতেমা ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, সিংগাইর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
এসআই