ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাস উৎসব

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাস উৎসব পুণ্যস্নান

সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব। সুন্দরবনের দুবলার চরে সোমবার (৩০ নভেম্বর) ভোর ৬টায় শুরু হওয়া পুণ্যস্নান শেষ হয় সকাল ৭টায়।

হাজার হাজার পুণ্যার্থী সাগরের লোনা পানিতে স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের রাস উৎসব। স্নানের পরপরই সবাই ফিরতে শুরু করেছেন নিজ গন্তব্যে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাগরের লোনা পানিতে স্নান করছেন। জোয়ারের লোনা পানিতে স্নান করলে তাদের পাপ মোচন হবে এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন তারা। স্নান করার সময় অনেকে বিভিন্ন গাছ, পাতা সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দেন। মুহুর্মুহু উলুধ্বনি আর মোমবাতি জ্বালিয়ে আরাধনা করেন তারা। করোনার কারণে পুণ্যার্থীরা মুখে মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছেন। অন্যবার রাস মেলা থাকায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ এলেও এবার মেলা বন্ধ থাকায় প্রায় ১৫ হাজার লোক সমাগম হয়েছে রাস উৎসবে।  

খুলনার কয়রা থেকে আসা পুণ্যার্থী তাপন পাল বলেন, রাস উৎসবে এসে লোনা পানিতে স্নান করলে অতীতের সব পাপ মোচন হয়। এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে এসে পুণ্যস্নান করেছি। অতীতের সব পাপ মোচন হয়ে গেছে। আগামীতে আমি ভালো হয়ে চলবো। আমি কিছু মানত করেছি। আশা করি, তা পূরণ হবে।

এর আগে রোববার (২৯ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাস উৎসব।

করোনা পরিস্থিতিতে এবার রাস উৎসবে কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা ও সোমবার সকালে দুবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের রাস উৎসব শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র পুণ্যার্থীদের আগমনে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকতার কোনো কমতি ছিল না সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের।

প্রতিবছর কার্ত্তিক মাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা ও পুণ্যস্নানের জন্য দুবলার চর বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা হয়ে চলেছে। জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত নাম হরিভজন (১৮২৯-১৯২৩) এ মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাস পূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের পানিতে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউ আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ।

আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।