ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

একটি ছোট সেতু তদারকিতে পরামর্শকদের আবদার ৮১ কোটি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২০
একটি ছোট সেতু তদারকিতে পরামর্শকদের আবদার ৮১ কোটি

ঢাকা: মাত্র ৩২০ মিটার দৈর্ঘের ছোট একটি সেতু নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক সেবা ক্রয়ের জন্য ৮১ কোটি ১৬ লাখ ২৪ হাজার টাকার আবদার করা হয়েছে। পরামর্শকের কর্মপরিধি (টিওআর) ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।

পরামর্শক সংখ্যা থোক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পে পরামর্শক সেবার ব্যয় অত্যধিক বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করতে বলা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে।  

‘ময়মনসিংহে কেওয়াঘাটখালি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় এমন আবদার করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় সরকারি অর্থায়ন ৮৬৩ কোটি টাকা এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেবে। ময়মনসিংহ সদরে চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

রোববার (২৯ নভেম্বর) সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে। ৩২০ মিটার ছোট সেতুর জন্য ৮১ কোটি টাকা পরামর্শক ব্যয় বেশি বলে মন্তব্য করেছে কমিশন। এই বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে পরামর্শক ব্যয় কমানো হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

অতিরিক্ত পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। মাত্র ছোট একটা সেতুতে ৮১ কোটি টাকা পরামর্শক ব্যয় বেশি বলে মনে হয়েছে। পিইসি সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সবকিছু আলোচনা করে একটা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ০২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ৪৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এছাড়া পুনর্বাসনের জন্য ৯০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুনর্বাসন ব্যয়ের পরিকল্পনা ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি ডিপিপিতে উল্লে করা হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে সভায় আলোচনা হতে পারে।

প্রকল্পের ডিপিপিতে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রাকচারের জন্য আলাদাভাবে ব্যয় প্রাক্কলন দেখাতে হবে। প্রকল্পে মিস্টল আর্চ বিজ্র নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মাণ ব্যয় অন্যান্য ব্রিজের তুলনায় অধিক হলেও এ ক্ষেত্রে স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মাণের যৌক্তিকতা এবং অন্যান্য ব্রীজের সঙ্গে নির্মাণ ব্যয়ের তুলনা সভায় আলোচনা করা প্রয়োজন।

প্রকল্পের আওতায় ১৩ জন জনবল নিয়োগের জন্য বেতন ও ভাতাদি খাতে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এফাড়া ১২’শ জনমাস জনবল আউট সোর্সিংয়ের জন্য ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত জনবলের বিষয়ে অর্থবিভাগের পদ ও জনবলের সংখ্যা নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশের আলোকে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় এনজিও ক্রয়ের জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এনজিও সেবা ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তাসহ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা ডিপিপিতে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।  

ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি ব্রীজ, ওভারপাস ও ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চারলেনে নির্মাণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সঙ্গে রাজধানী নিরাপদ ও উন্নত যোগাযোগ স্থাপন করা। কেওয়াঘাটখালী সেতু নির্মাণের অন্যান্য কাজ করা হবে।

ময়মনসিংহ শহরটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। নদের অপর পাশে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও শেরপুর জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, হালুয়াঘাট এবং তারাকান্দা উপজেলা অবস্থিত। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বিদ্যমান শম্ভূগঞ্জ সেতুটি এসব অঞ্চলের জনগণের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। ফলে অসংখ্যা যানবাহন সেতুর উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। ময়মনসিংহ বিভাগে তিনটি বড় স্থলবন্দর অবস্থিত। স্থলবন্দরসমূহ হলো নেত্রকোণা জেলার বিজয়পুর, শেরপুর জেলার নাকুগাঁও এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট। এ স্থলবন্দরসমূহ দিয়ে প্রতি বছর ভারত থেকে পাথর ও কয়লা আমদানি করা হয়। তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হয়।

ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিদ্যমান শম্ভুগঞ্জ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৫৫ মিটার এবং প্রস্থ ১১ মিটার। সেতুর এপ্রোচ একটি চার রাস্তার মোড় রয়েছে। চার রাস্তার মোড়ের একপাশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। মোড় থেকে সেতুটি মাত্র ২৫০ মিটার দূরে অবস্থিত। ফলে শহরের বিভিন্ন দিক থেকে ট্রাফিক এসে সেতুটি যানজট সৃষ্টি করে। ময়মনসিংহ শহর থেকে নদের অপর পাশে নতুন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে এই এলাকায় বিশাল ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হবে। অনতিবিলম্বে বিকল্প সেতু নির্মাণ করা না হলে শহরে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এছাড়া স্থলবন্দরের যোগাযোগ রক্ষা এবং শহরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃস্টি হবে। ফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

প্রস্তাবিত ৩২০ মিটার দৈর্ঘের সেতুটি নির্মিত হলে ময়মনসিংহ বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলা এবং সে অঞ্চলের স্থলবন্দর , ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সঙ্গে রাজধানীর সড়কযোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে। ফলে সেতুটি নির্মাণে এআইআইবি ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সওজ-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী(ময়মনসিংহ জোন) সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন, প্রকল্পের বিষয়য়ে আমি কিছু জানি না। ওভার টেলিফোনে প্রকল্পের বিষয় কারোর সঙ্গে কথা বলি না। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২০
এমআইএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।