হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চারিনাও গ্রামে ছয় বছরের শিশু সাথী হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের পথ মসৃন করার জন্য জুসের সঙ্গে বিষপান করিয়ে মা ফাহিমা আক্তার সাথীকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১১টায় সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই দিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় ফাহিমার জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
ফাহিমা চারিনাও গ্রামের বাসিন্দা। পার্শ্ববর্তী বাড়ির সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে তোফাজ্জল হোসেন, রবিউল ইসলাম সূর্য ও সাথী আক্তারের জন্ম হয়েছিল।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ফাহিমার স্বামী সিরাজুল পেশায় টমটম চালক ও ফাহিমা একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে সিরাজুলের বন্ধু ও তার প্রতিবেশী আক্তার হোসেনের সঙ্গে ফাহিমার পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের পর আক্তার ফাহিমাকে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী দেন এবং সিরাজুলকে ছেড়ে তাকে বিয়ের জন্য বলেন। কিন্তু তিন সন্তানকে রেখে ফাহিমা দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মত হচ্ছিলেন না।
একদিন সিরাজুলকে ডিভোর্স দেওয়ার উদ্দেশ্যে আক্তারকে নিয়ে আদালতেও যান ফাহিমা। কিন্তু তিন সন্তানের কথা মনে হলে সেখান থেকে ফিরে আসেন। আরও কিছুদিন গেলে ফাহিমার তিন সন্তানকে হত্যার পর দ্বিতীয় বিয়ের পরিকল্পনা করেন দু’জন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৮ অক্টোবর বিকেলে ফাহিমা তার স্বামী সিরাজুলকে টমটম চালাতে পাঠিয়ে দেন। এরপর লিচু জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিন সন্তানকে পান করান ফাহিমা ও তার পরকিয়া প্রেমিক আক্তার।
এরপর ফাহিমা ও তার খালা শাশুড়ি বিষাক্রান্ত তিন শিশুকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক সাথীকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তোফাজ্জল হোসেন, রবিউল ইসলামকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার প্রায় এক মাস পর গত ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামালার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ নভেম্বর সদর মডেল থানা পুলিশ ফাহিমাকে গ্রেফতার এবং আদালতে তিন দিনের রিমান্ডে আনে। এরপর মঙ্গলবার নিজের মেয়েকে হত্যার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন ফাহিমা।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী জানান, সিলেট থেকে চিকিৎসা নিয়ে তোফাজ্জল ও রবিউল এখন সুস্থ অবস্থায় তাদের বাবার কাছে আছেন। আক্তারকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
আরবি