রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে পূর্বদিকে তাকালে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে ইট দিয়ে তৈরী একটি স্তম্ভ দেখা যাবে। দেখতে সাদামাঠা মনে হলেও এর মহত্ব অনেক বেশি।
স্মৃতিস্তম্ভটি বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ১৯৭১ সালের ভয়াল দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ার আহবান জানাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা।
বধ্যভূমি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর চিত্তরঞ্জন মিশ্র বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহীসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা যেমন নাটোর, বগুড়া, পাবনা এবং রংপুর থেকে শতশত নিরপরাধ মানুষকে এখানে ধরে নিয়ে এসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জোহা হল সংলগ্ন প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত স্তম্ভটি ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশের স্মৃতিকে ধারণ করে আছে।
তিনি আরও বলেন, বধ্যভূমিতে যে স্মৃতিস্তম্ভটি বানানো হয়েছে, সেটা অল্প জায়গা নিয়ে। কিন্তু সেখানকার পুরো এলাকাটাই বধ্যভূমি। প্রায় ৮-১০টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল। আমরা যখন স্বাধীনতার পরে বধ্যভূমি খুঁড়ি, তখন অসংখ্য হাড়গোড় উদ্ধার করি। পরে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় প্রদান করা হয়। ধারণা করা হয়, ওই গণকবরগুলোতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
জানা যায়, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ১৯৯৮ সালে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক সরকারের নিকট সুপারিশ করেন। তারপর পরবর্তী উপাচার্য প্রফেসর এম. সাইদুর রহমান খান ১৯৯৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্থানটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে ১৩টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের জন্য যে প্রকল্প গ্রহণ করে, তার আওতায় এই প্রকল্পটিও গৃহীত হয়।
২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য এম. সাইদুর রহমান খান ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ফাইসুল ইসলাম ফারুকী এবং ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ নির্মাণ কাজ উদ্ভোধন করেন।
বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে সমতল ভূমি থেকে কংক্রিটের বেদি তৈরি করা হয়েছে। বেদির ঠিক মাঝখানে বড় একটি কূপ। কূপের মাঝখানে দণ্ডায়মান ৪২ ফুট উঁচু এবং ৬ স্তম্ভবিশিষ্ট একটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। স্তম্ভটির গায়ে রয়েছে কালো কালো দাগ, যা শহীদদের রক্ত শুকানো দাগের প্রতীক। অন্যদিকে কূপটিকে মৃত্যুকূপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ বধ্যভূমি দেখলেই অনুভব করা যায় কি নির্মমতা ঘটেছিল সে সময়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন, বধ্যভূমিতে গেলে অজান্তেই মনটা যেন ১৯৭১ সালে চলে যায়। ইতিহাস থেকে যা জেনেছি, সেই ভয়াল দিনের কথা স্মরণ হলে এখনো মনটা বিষিয়ে ওঠে। পাশাপাশি অনুপ্রেরণা পাই এই ভেবে যে, ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন দিয়ে যে দেশটি স্বাধীন করে গেছেন, সে দেশকে যেভাবেই হোক সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল কাশেম বলেন, এদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী এ বধ্যভূমি। দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তারা আমাদের দেশের সূর্য সন্তান। তাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। নতুন প্রজন্ম বধ্যভূমিতে আসলে জানতে পারবে কত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। তাদের মধ্যে জাগ্রত হবে দেশপ্রেম।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
ওএফবি