খাগড়াছড়ি: ২০০৩ সাল থেকে খাগড়াছড়ির সব ক’টি ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। তবে, বন্ধ হয়নি ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ।
জানা যায়, খাগড়াছড়ির মোট ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতে ৪৩টি ইটভাটা থাকলেও এ বছর ৩৮টি ইটভাটায় চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ৪টি, মহালছড়িতে ৩টি, দীঘিনালায় ৪টি, পানছড়িতে ৩টি, মানিকছড়িতে ২টি, মাটিরাঙ্গায় ১২টি, গুইমারায় ৫টি ও রামগড়ে ৬টি। এরমধ্যে ১৭টি টিনের চুল্লি। শুধুমাত্র লক্ষীছড়ি উপজেলায় কোনো ইটভাটা নেই।
এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য জ্বালানী হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠ এনে স্তুপ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬ মাসের চুক্তিতে এসে শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছে। এই ৬ মাস তারা মাটি কাট থেকে শুরু করে কাঁচা ইট তৈরি এবং সর্বশেষ আগুন পুড়িয়ে তা বিক্রিযোগ্য করা পর্যন্ত কাজ করবে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এক একটি ইটভাটা থেকে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট উৎপাদন করা হয়। প্রতিবারে ভাটায় ৭ থেকে ৮ লাখ ইট পোড়ানো হয়। প্রতি লাখ ইট তৈরিতে জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজন হয় ৮শ মণ কাঠ। বছরে প্রত্যেক ইট ভাটায় দরকার হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মণ কাঠ। সে হিসেবে প্রায় ১৫ লাখ ২০ হাজার টন কাঠ জ্বালানী হিসেবে ইট ভাটায় পোড়ানো হয়। মূলত পাহাড়-বন থেকে এসব কাঠ জোগান দেওয়া হলেও ইটভাটার মালিকরা বলছেন ভাটায় ব্যবহৃত জ্বালানি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান ও সরকারি পারমিটের কাটা গাছের ডালপালার ওপর চলছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে যেকোনো ইটভাটা ১২০ ফুট উচ্চতায় স্থায়ী চিমনি ব্যবহার করতে পারবে। পরিবেশবান্ধব কমপ্রেসড ব্লক ইট, হফম্যান কিলন ইত্যাদি ইটভাটা করা যাবে। তবে খাগড়াছড়ির কোনো ইটভাটা পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে উঠেনি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ সালের ৫৯ নম্বর আইনের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনের বিষয়ে বিধি-বিধান আরোপ করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করে কোনো ভাটা যদি ইট প্রস্তুত করে সেক্ষেত্রে এক বছরের কারাদণ্ড কিংবা এক লাখ টাকা জরিমানা কিংবা দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৫ অনুযায়ী ইট তৈরির জন্য যদি কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল থেকে মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ওই আইনের ৬’এ বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন তাহলে তিন বছরের জেল বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ জানান, ‘ইট তৈরিতে ব্যবহারের জন্য টন টন নানান জাতের গাছ কেটে মজুদ করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে মাটির ওপরের অংশ হচ্ছে জমির প্রাণ। বিভিন্ন ফলন উৎপাদন হয় তা এই জমির ওপরের উর্বর অংশ থেকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে জমির ওপরের অংশটুকু ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য কেটে নেওয়া হচ্ছে। তিনি এই ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এই বিষয়ে খাগড়াছড়ির ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
তবে, নাম প্রকাশে একাধিব মালিক বলেন, দূরত্বের কারণে কয়লা দিয়ে ইটভাটা চালানো ব্যয়বহুল। তাই বাধ্য হয়ে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আস্তে আস্তে কয়লার ব্যবহার বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এই বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, গেলবার আমরা ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। এবার আরো বেশি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এই ব্যাপারে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
এডি/এএটি