সাভার (ঢাকা): সাভারে শহীদ গোলাম দস্তগীর টিটোর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন গণমাধ্যম কর্মীসহ সুশীল সমাজের মানুষ। তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে সাভার মুক্ত দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটোর রক্তের বিনিময়ে হানাদারমুক্ত হয় সাভার।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ডেইরি গেট এলাকায় বীর কিশোর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানানো হয় ও শহীদ টিটোর আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এসময় সিনিয়র সাংবাদিক আশুলিয়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক লাইজু আহম্মেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সাভার মুক্ত দিবসের দিনে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটো শাহাদত বরণ করে। আমরা সংবাদকর্মীরা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে টিটোকে স্মরণ করে আসছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাভার মুক্ত দিবস পালনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সময় টেলিভিশনের ঢাকা জেলা সাব-ব্যুরো (সাভার) প্রতিনিধি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, স্বাধীনতার এই বীর শহীদের সমাধিটির ব্যাপারে নজর নেই স্থানীয় প্রশাসনের। গত বছর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে আমরা নিজেরাই টিটোর সমাধিটি ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন করে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম। তখন প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদেরও জানানো হয়েছিলো। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও জাতির বীর সন্তানের এই সমাধিটিতে ধুলো-বালি জন্মে অপরিচ্ছন্ন রয়ে গেছে। তাই এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাক হানাদারবাহিনীরা সাভার থেকে পিছু হাটলেও নিয়ে গেছে কিশোর দস্তগীরের তরতাজা প্রাণ।
হানাদারবাহিনীর বৃষ্টির মত ছোড়া গুলিতে সাভারে শহীদ হয় মানিকগঞ্জের গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটু। তাকে সমাধিস্থ করা হয় সাভারেই। কারণ সে সাভারের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকেই মুক্তিবাহিনী হিসেবে কাজ করেছিল। মৃত্যুর পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেটের পাশে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটুর দেহকে সমাধিস্থ করা হয়।
সেই যুদ্ধের ৪৯ বছর পার হয়ে গেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ টিটুর সমাধি স্থানটি রয়েছে অযত্নে-অবহেলায়। ধুলা-ময়লা যুক্ত ও গাছের পাতা পড়ে থাকা সমাধিতে শুয়ে আছেন এই বীর যোদ্ধা।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা টিটুর সমাধিস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সমাধির উপরে ধুলো, ময়লার আস্তরণ পড়ে আছে। গাছের ডালপালাগুলো কাটার অভাবে বড় হয়ে গেছে। পাশেই ডাস্টবিনের মত ময়লা ফেলে স্তুপ করা হয়েছে। টিটোর সমাধি ফলকের লেখাগুলোও প্রায় উঠে গেছে।
গোলাম দস্তগীর টিটোর সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান সেই যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে জানান, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে সাইকেলে করে একজন এসে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দিলো যে গাজীপুর থেকে পাকহানাদার বাহিনীরা আসছে। আমাদের কমান্ডারের নির্দেশে সেদিন আমরা পাকবাহিনীকে রুখতে ও যুদ্ধ করতে রওনা হই। সেদিন আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো পাকবাহিনীকে এ দেশ থেকে বিতারিত করা।
হাবিবুর রহমান গোলাম বলেন, সহযোদ্ধাদের নিষেধ উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় পাকবাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো। এরপরেও যুদ্ধ চালিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় আহত হয় এক মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর তিন জন পাক সেনা নিহত হয়। পরাজিত হয়ে পিছু হটে পাকহানাদার বাহিনী। পরে সাভারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
আরএ