যশোর: শিল্প-সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন যশোর সাহিত্য পরিষদের কার্যালয়ের একাংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সামনের সড়ক প্রশস্তকরণের কথা বলে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়।
সাহিত্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, তাদেরকে উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এমন তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দড়াটানা থেকে ঈদগাহ মোড় পর্যন্ত সড়কটি সংকুচিত থাকায় সেটা প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যালয়ের সামনের তিনফুট জায়গা রাস্তার জন্য দিতে সম্মতি দেয়। এরপর তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী শুধুমাত্র ওই তিনফুট জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
যশোর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শাহিন ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ভবন ভাংচুরের ব্যাপারে তাদেরকে লিখিত কোন নোটিশ দেয়নি। বরং মাত্র তিন কার্যদিবস আগে মৌখিকভাবে তাদেরকে ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ ব্যাপারে তারা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ জাতীয় সংগঠন জেলা পরিষদ চত্বরে রাখতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার আকস্মিক সাহিত্য পরিষদের কার্যালয়ে বুলডোজার চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্যে ভবনের তিনফুট ভেঙে ফেললেও বাকি বৃহৎ অংশ এখনও ব্যবহার উপযোগী। কিন্তু সেটাও ব্যবহার করতে দিচ্ছে না জেলা পরিষদ।
উল্লেখ্য ১৯৮৩ সালে যশোর সাহিত্য পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ওই বছরই তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জেলা পরিষদ অভ্যন্তরে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে সেটা সাহিত্য পরিষদকে বরাদ্দ দেন। সেই থেকে ওই ভবনে সাহিত্য পরিষদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
যশোরের সাহিত্য আন্দোলন ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহিত্য পরিষদের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়, কবি আজীজুল হক, হাসান আজীজুল হক, ড. মো. মনিরুজ্জামান, হেলাল হাফিজ, রফিক আজাদ, আহসান হাবীব, নির্মলেন্দু গুণের মত খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকরা একাধিকবার যোগ দিয়েছেন যশোর সাহিত্য পরিষদের বিভিন্ন আয়োজনে। কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, দারা মাহমুদ, ফখরে আলমসহ পরিচিত কবি-সাহিত্যিকদের শিল্পচর্চার হাতেখড়ি এ সংগঠনে।
যশোর সাহিত্য পরিষদের সহ সভাপতি ছড়াকার রিমন খান বাংলানিউজকে বলেন, শিল্প-সাহিত্য চর্চার এই পিঠস্থানকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব জেলা পরিষদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। কিন্তু সাহিত্য ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী এমন সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবর্তে উচ্ছেদ করাটা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, আমরা সড়ক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে নয়। বরং উন্নয়নের প্রয়োজনে তিন ফুট কেন, আরও বেশি জায়গা ভেঙে দিতেও আপত্তি নেই। কিন্তু আসলে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে উচ্ছেদ করতেই উন্নয়নের বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে।
সাহিত্য পরিষদের আরেক কর্মী শামীমা ইয়াসমিন শম্পা অভিযোগ করেন, রাস্তার জন্যে তিনফুট নয় বরং সাহিত্য পরিষদকে নিশ্চিহ্ন করার দুরভিসন্ধি থেকেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এর প্রমাণ, আকস্মিক ভাংচুর চালানোর সময় পরিষদ কার্যালয়ে থাকা আমাদের সাহিত্যকর্ম, পাণ্ডুলিপিসহ অন্যান্য মূল্যবান বইপত্রও সরিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়া হয়নি। শ্রমিক দিয়ে সেগুলো এনে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, ভবনটি জেলা পরিষদের। সাহিত্য পরিষদ সেটা ব্যবহার করতো মাত্র। এখন ওই ভবনের যে অবস্থা সেখানে কোনো লোক ওঠানো সম্ভব না। এমনকি সংস্কার করেও সেটা ব্যবহারের পরিবেশ নেই। ফলে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি, কেউ জমি দিলে জেলা পরিষদের তহবিল দিয়ে সেখানে সাহিত্য পরিষদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৩ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
ইউজি/এসএমএকে/এমএমএস