রাজশাহী: রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক অঙ্কে নেমে এসেছে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ারও আবহাওয়া পূর্বাভাস রয়েছে।
শনিবার থেকে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) ছিল ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শনিবার তাপমাত্রা এক লাফে কমেছে ৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এরইমধ্যে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। এর ফলে উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভোর ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ ও দুপুর ১২টায় ৭৫ শতাংশ।
এদিকে প্রতিদিন তাপমাত্রা কমায় রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শনিবার সকাল থেকেই আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। কিন্তু সূর্যের সেই আলোকরশ্মী শীতার্ত মানুষের শরীরে উষ্ণতা ছড়াতে পারেনি। উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপতে শুরু করেছে শীতবস্ত্রহীন ছিন্নমূল মানুষ।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। পথের কিনারায় তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আর সন্ধ্যা নামলেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ দোকানপাট ও হাট-বাজার। গ্রামগুলোতে শীতের প্রকোপ আরও বেশি। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. সাইফুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এরইমধ্যে নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় এরইমধ্যে চারটি ওয়ার্ডে রুম হিটার লাগানো হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের প্রস্তুতি থাকায় চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
শীতের তীব্রতায় অসুস্থতার পাশাপাশি রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একে তো করোনাকাল, তার ওপর শীতের প্রকোপ! সব মিলিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দিনমজুররা। কাক ডাকা ভোরে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্য উঁকি দিতে না দিতেই তারা কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে ছুটে আসছেন এ শহরে। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কের পাশে ফুটপাতে বসে থাকছেন। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। শীতের মধ্যে কাজ না পেয়ে তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
মহানগরের গৌরহাঙ্গা রেলগেটে শ্রমের হাটে আসা পবার মল্লিকপুর গ্রামের আফসার আলী বাংলানিউজকে জানান, গত দুই থেকে তিন দিন শীত বেড়েছে। আর কমেছে কাজ। ভোরের আলো ফোটার আগেই তার মতো অনেকেই গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে শহরে চলে আসছেন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও কাজ মিলছে না! শীতের কারণে মানুষজনের চলাচল কমে এসেছে। যে কারণে কয়েকদিন থেকে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
আর শীতের দাপটে মহানগরসহ রাজশাহী অঞ্চলের হাট-বাজারে গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। শীতবস্ত্র কিনতে প্রতিদিনই মহানগরের ফুটপাতে নিম্নআয়ের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। তবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা যেতে পারছেন না কোনো দোকানেই। অনেকেই তাকিয়ে আছেন সমাজের বিত্তবান ও সরকারি সহায়তার দিকে। তবে এরইমধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে।
রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের হাতে থাকা ৫৪ হাজার কম্বল এরইমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতার্তদের হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকায়ও প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া রাজশাহী জেলায় শীত মোকাবিলার জন্য নগদ ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। রাজশাহীর ৯ উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে এরইমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা শীতার্তদের মধ্যে সরকারি এ নগদ অর্থ সহায়তা এককালীন অনুদান হিসেবে বিতরণ করবেন বলেও জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।
এ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকে ছিন্নমূল শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক কম্বল বিতরণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে এলে শীতার্ত মানুষ এ শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে নিদারুণ দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
এসএস/আরবি