টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে দিয়েছেন পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন।
জানা যায়, একটি দোকান পাওয়ার আশায় চরা সুদে টাকা এনে মেয়রের হাতে তুলে দেন বর্নিচন এলাকার সার ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া।
শুধু বাদশা মিয়া নন, এরকম প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ীকে দোকান দেওয়ার নাম করে দুই লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন ধনবাড়ী পৌরসভার কিচেন মার্কেট এলাকায় গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ করেন।
চার কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভা তিন তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট এক তলা ভবনের ‘পৌর কিচেন মার্কেট’ ২০১৬ সালের ২ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। মার্কেট নির্মাণ করার আগেই সেখানকার ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা করে নেন মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন। মার্কেটের নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ২০১৭ সালের ২০ জুলাই শতভাগ শেষ করা হয়। তিন বছর হলো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অথচ আজও ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
বিধি মোতাবেক পৌরসভা কিচেন মার্কেট দোকান বরাদ্দ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দোকানের নির্ধারিত ভাড়ার ভিত্তিতে বরাদ্দের জন্য পৌরসভা পাবলিক আদর্শ আইনমালা ২০০৩ এর আওতায় প্রকৃত নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে দরপত্র আহবান করা। কিন্তু দোকান বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই পৌর মেয়র দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক (৯২) দোকানের চেয়ে তিনগুণ বেশি ব্যবসায়ীদের (প্রতি জনের) কাছ থেকে দুই লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন।
এদিকে অসহায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান বরাদ্দ না পেয়ে তিন বছর ধরে মার্কেটের সামনে, রাস্তার পাশে এবং ফুটপাত দখল করে কাঁচাবাজার ও মাছের ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অপরদিকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কিচেন মার্কেট দীর্ঘ তিন বছরেও চালু না হওয়ায় পৌর কৃর্তপক্ষের অযত্ন আর অবহেলায় মার্কেটের সবকটি জানালার গ্লাসে ভাঙন ও ভবনে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মার্কেটের মেইন গেটও মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
ছত্রপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম। তিনি গত তিন বছর আগে কিচেন মার্কেটের সামনে ব্যবসা করতেন। ক্ষুদে এই ব্যবসায়ী দোকান পাওয়ার আশায় চরা সুদে দুই লাখ টাকা ধার এনে মেয়রের হাতে তুলে দেন। কিন্তু টাকা দিয়েও দোকান বরাদ্দ না পাওয়ায় তিনি এখন ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে রাজমিস্ত্রীর কাজ করছেন।
শফিকুল ইসলাম কালু ফকির নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি গত তিন বছর আগে মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপনের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন দোকান পাওয়ার আশায়। কিন্তু এখন পর্যন্তও তিনি দোকান বা টাকা ফেরত পাননি। এ কারণে বাধ্য হয়ে তিনি মার্কেটের বাইরে ফুটপাতে দোকান করছেন।
একই অভিযোগ মো. সাখাওয়াত হোসেনের। তিনিও টাকা দিয়ে দোকান বরাদ্দ না পেয়ে বাধ্য হয়ে মার্কেটের সামনে ফুটপাতে দোকান করছেন। তিনি জানান, ধার করে আনা টাকা মেয়রকে দিয়ে এখন তিনি চরম হতাশায় রয়েছেন। দোকানটি পেলে হয়তো তিনি একটু ভালোভাবে চলতে পারতেন।
আব্দুর রহিম নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, গত চার বছর আগে মেয়রকে দুই লাখ টাকা দিয়েছেন মার্কেটে দোকান পাওয়ার আশায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে দোকান দেওয়া হয়নি। এ বিষয় নিয়ে মেয়রকে কিছু বললে তিনি টালবাহানা করেন।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বাংলানিউজকে জানান, মার্কেটটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব ব্যাংককে ২০ ভাগ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। টাকা পরিশোধ করা হলেই মার্কেটটি চালু করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
আরএ