ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভারতের মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের আস্তানা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
ভারতের মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের আস্তানা

ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতির উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক। আসামের গৌহাটিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের এই সম্মেলনে ওই সব আস্তানা ধ্বংস করারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

বিএসএফ মহাপরিচালক ওই সব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনের (২২-২৬ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গতকাল শুক্রবার বিকেলে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়। এই প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন।

অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশ নেয়। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ফ্রন্টিয়ার আইজিরা এবং সে দেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন।

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতির উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওই সব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/দুর্বৃত্ত কর্তৃক বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে রাতে যৌথ টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরো বেগবান করা, যথার্থ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

আরও পড়ুন: সীমান্ত হত্যা রোধে স্পর্শকাতর এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ যৌথ টহল

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সর্বদা দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের প্রশংসা করে এবং তারা প্রত্যাশা করে যে বিজিবি ও বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

বিএসএফ মহাপরিচালক অদূর ভবিষ্যতে সীমান্তে হত্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদারকরণ, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সমন্বিত টহল বৃদ্ধি করে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ যেমন মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদি পশু, জাল মুদ্রা, স্বর্ণ প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব অপরাধ দমনে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন।

বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে উভয় দেশের যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে, যা উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক এবং এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা দরকার। এ ব্যাপারে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন চোরাকারবারি সম্পর্কিত তথ্য তাত্ক্ষণিক আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।

প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, যা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে—এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম অথবা সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে এবং একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

উভয় পক্ষ বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই আগে অবগত করা ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের ব্যাপারেও তারা সম্মত হয়েছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে (ভার্চুয়ালি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীর ১.৩ কিলোমিটার নিরীহ পথের অনুরোধ বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বিজিবি মহাপরিচালক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি অনুসরণ করার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালককে অনুরোধ করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।

বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক সম্মেলনের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উভয়েই সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষ মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত পোষণ করে।

প্রতিবেদন: কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।