ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্ধারিত সময়েই মেঘনা-গোমতী সেতু: বাঁচলো ১৪৬৫ কোটি টাকা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২১
নির্ধারিত সময়েই মেঘনা-গোমতী সেতু: বাঁচলো ১৪৬৫ কোটি টাকা

ঢাকা: প্রকল্প মানেই সময় বৃদ্ধি। অধিকাংশ প্রকল্প বেঁধে দেওয়া সময়ে বাস্তবায়ন হয় না।

ফলে ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে প্রকল্পের মেয়াদ। মেয়াদের সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রকল্পের ব্যয়ও। তবে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে ‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ প্রকল্পে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কারণে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে ৭ হাজার ২২ কোটি টাকা।

নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের সাশ্রয় হওয়া অর্থের মধ্যে আছে সরকারের ৭৪৮ কোটি টাকা ও উন্নয়ন সহযোগী জাইকার ৭১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের হিসাব চূড়ান্ত করার পর প্রকৃত সাশ্রয় বের করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার কারণে সংশোধন করা হবে। ফলে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

নগরীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির ব্যয় কমিয়ে ডিপিপি চূড়ান্তভাবে সমন্বয় করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে প্রকল্পটির ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটা ভালো বিষয়। প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নের কারণেও ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে এমন ধারা অব্যাহত থাকলে তা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক।

নির্ধারিত মেয়াদে সম্পন্ন হওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৬ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু এবং দ্বিতীয় গোমতী সেতু উদ্বোধন করেন।

সাশ্রয় হওয়া অর্থ জাইকা সাধারণত ফেরত নেয় না। জাইকার অর্থায়নে চলমান অন্য প্রকল্পে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে সরকারের সাশ্রয় হওয়া অর্থ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি চূড়ান্তভাবে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। প্রকল্পের সাশ্রয় হওয়া অর্থের মধ্যে সরকারের ৭৪৯ কোটি টাকা ও উন্নয়ন সহযোগী জাইকার ৭১৬ কোটি টাকা। জাইকা সাশ্রয় হওয়া অর্থ অন্য প্রকল্পে দেবে। তবে সরকারের অর্থ সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার অর্থায়ন ৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা এবং সরকারের ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে নতুন তিন সেতু নির্মাণ ও পুরনো তিন সেতু পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। প্রকল্পে যৌথভাবে জাপানের চারটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে।

দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণে ব্যয় ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। আর পুরনো প্রথম গোমতী সেতু পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬০ টাকা। দ্বিতীয় গোমতী সেতুর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪১০ মিটার, প্রস্থ ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার। যানবাহনের জন্য জায়গা রয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ মিটার ও ফুটপাত ১ দশমিক ৫০ মিটার। সেতুর স্প্যান সংখ্যা ১৭টি। অপরদিকে ৯৩০ মিটার দৈর্ঘের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

বিদ্যমান প্রথম মেঘনা সেতু পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয় ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় গোমতী সেতুর মতো দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর প্রস্থ ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার, যানবাহনের জন্য জায়গা রয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ মিটার ও ফুটপাত ১ দশমিক ৫০ মিটার। স্প্যান রয়েছে ১২টি। দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতুর সঙ্গে রয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণে খরচ ধরা হয় ৯৫০ কোটি টাকা।  

আর কাঁচপুর সেতুর পূর্বাংশের ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। বিদ্যমান প্রথম কাঁচপুর ব্রিজ পুনর্বাসনে খরচ ২৭০ কোটি টাকা। নতুন দুই সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরুর পর থেকে এ মহাসড়কে যানজট নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হলেও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে দুই লেনে গাড়ি চলাচল করতো। মূলত এ কারণেই যানজট সৃষ্টি হতো। নতুন দুই সেতু উদ্বোধনের কারণে সেতুতেও চার লেনে গাড়ি চলাচল করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২১
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।