ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রথম হয়েও যে কারণে পুলিশে চাকরি হলো না মীমের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
প্রথম হয়েও যে কারণে পুলিশে চাকরি হলো না মীমের মীম আক্তার

খুলনা: সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থেকেও পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না খুলনার মীম আক্তার। পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট হওয়ার পরও খুলনা জেলার কোটায় আবেদন করায় বাদ পড়েছেন মীম।

খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে মীমকে জানানো হয়েছে, খুলনার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় চাকরিটি তাকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মীমের আবেদনপত্র সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩নং আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের ডা. বাবর আলীর ভাড়াটিয়া বাড়ির বাসিন্দা তিনি। তার বাবা মো. রবিউল ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মীম সব ধাপ পার কর‌লেও পু‌লিশ ভে‌রি‌ফি‌কেশ‌নে আট‌কে যাওয়ার কারণ তার জ‌মিজমা বা স্থায়ী ঠিকানা নেই, তা নয়। মীমের স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাটের চিতলমারিতে। কিন্তু বিষয়‌টি তিনি গোপন ক‌রে‌ছেন বা জানান‌নি এবং আবেদ‌নেও উল্লেখ ক‌রে‌নি।

মীমের বাবা রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে হলেও ১৯৮৮ সাল থেকে খুলনায় এসে বসবাস করছি।

স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট হলে খুলনায় আবেদন করলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতেও আমার নামে কোনো জমি নেই। খুলনাতেই থাকি তাই এখান থেকেই আবেদন করেছি।

পৈত্রিক সম্পত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে রবিউল বলেন, আমার বাবা আব্দুল লতিফ শেখ এখনো জীবিত আছেন। তবে তিনি খুব অসুস্থ। পৈত্রিক জায়গা জমি এখনও ভাগ হয়নি।

রবিউল ইসলাম বলেন, মেয়েদের মধ্যে মীম প্রথম হয়েছে। অনেক কষ্ট করে এত দূরে এসেছে। আমার নামে জমি না থাকায় সে কেন চাকরি বঞ্চিত হবে? আমি আমার মেয়ের চাকরির দাবি জানাই।

‘ভূমিহীন’ বলে বরিশাল পুলিশে চাকরি হচ্ছে না আসপিয়ার এমন খবর সম্প্রতি সময়ে আলোচিত হওয়ায় তাকে ঘরসহ চাকরির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাকে জমি ও ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের পর খুলনার মীমের পরিবারও সেই আশার করছেন বলে অনেকের অভিমত।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের জন্য সাতটি ধাপ অনুসরণ করে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হয়।

ধাপগুলো হলো-  প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও  চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। এর মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট হওয়ার পরও খুলনা জেলার কোটায় আবেদন করায় মীম বাদ পড়েছেন।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থী মীম স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে খুলনায়। অথচ তার স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাটে। সে তথ্য গোপন করেছে। খুলনায় তার ভূমি নেই তাও জানায়নি। তারা বলছে ভূমিহীন। কিন্তু ভূমিহীন নয়, গ্রামের বাড়িতে মীমের দাদা, চাচাদের বসবাস। সেখানে পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে।   খুলনার অধিবাসী যারা তাদের জন্যই তো খুলনা কোটা। ভাড়া বাসাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা গেলে মেধাবিরা তো সব বাসা ভাড়া নিয়ে যে যে জেলায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে সেখানেই আবেদন করতো। তাহলে জেলা কোটার কোন প্রয়োজন ছিল না। অন্য জেলার কাউকে যদি চাকরি দেওয়া হয় তাহলে খুলনার স্থায়ী বাসিন্দারা বঞ্চিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।