ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবি

রাজশাহী: সাঁওতালি ভাষার লিপি বিতর্কের দ্রুত অবসান ঘটিয়ে অলচিকি লিপিতে ভারতের মতো বাংলাদেশেও সাঁওতালদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।

সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে সাঁওতালি ভাষার ভবিষ্যত ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

দিবসটি উপলক্ষে আদিবাসী ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, বাংলাদেশ সারনা ফাউন্ডেশন এবং সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়ন কমিটির যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।

বাংলাদেশ সারনা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক গনেশ মার্ডির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়ন কমিটির সুবাস মুরমু, আদিবাসী ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মানিক সরেন, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, রিপন মুর্মু, কর্নেলিউস মার্ডী, রাজেন হেমব্রম, আদিবাসী নারী নেত্রী জলিতা কিস্কু, সোনাবাবু হেমব্রম, নৃত্যশিল্পী সাবিত্রী হেমব্রম, শিবলাল টুডু প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন আদিবাসী সংগঠক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম।

আলোচনা সভায় বক্তারা বাংলাদেশেও সাঁওতালদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা; সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে সাঁওতালি একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগে সাঁওতালি ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করারো দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ভাষা হচ্ছে সাঁওতালি ভাষা এবং বর্তমান বাংলাদেশের কথ্য ভাষার মধ্যে সম্ভবত তৃতীয় বৃহৎ ভাষা। সাঁওতালি ভাষার অনেক কিছু নিয়ে এই উপমহাদেশের অনেক ভাষা আজ সমৃদ্ধ হয়েছে। একসময় সাঁওতালি ভাষার কোন বর্ণমালা না থাকলেও ১৯২৫ সালে সাঁওতাল পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু এই ভাষার জন্য অলচিকি লিপি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে এই লিপিটি দিয়েই পৃথিবীর সাঁওতাল জনগোষ্ঠী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ সাহিত্য চর্চা  করে আসছে। এই অলচিকি লিপি ব্যবহার করেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইন মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার ভার্সনও চালু হয়েছে।

২০০৮ সালের এপ্রিলে অলচিকি বিশ্বের প্রচলিত লিপিসমূহের তালিকা ইউনিকোড কনসর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিশ্বের অন্যতম লিপি হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং বর্তমানে অলচিকি বর্ণমালা ব্যবহার করে সাঁওতালি ভাষায় ভারতে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা দান কার্যক্রম চালু হয়েছে।

বক্তারা বলেন, সবদিক বিবেচনায় বাংলা, রোমান ও অন্যান্য লিপিগুলোর তুলনায় সাঁওতালি ভাষা লেখার ক্ষেত্রে অলচিকি লিপিই এগিয়ে আছে। তাই বাংলাদেশে চলমান যে বিতর্ক সেটি নিরসনে এবং সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উদ্যোগ গহণ করার আহ্বান জানান বক্তারা।

এর আগে ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের সংবিধানের শততম সংশোধনীতে সাঁওতালি ভাষা ৮ম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সাঁওতালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা পায়। তাই এই দিনটিকে সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস হিসেবে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, নেপালের সাঁওতালি ভাষাভাষি মানুষ পালন করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।