টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের ভেতর থেকে টেন্ডার ছাড়াই মেহগনিসহ বিভিন্ন ধরনের ১০/১২টি গাছ কেটে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে।
এদিকে গোপনে গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হলে স’মিল থেকে সেই গাছগুলো চিরাই করে কলেজে ফেরত আনা হয়। এরপরই কলেজের অধ্যক্ষের দাবি তিনি বিষয়টি জানার পরই গাছগুলোর কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল কুমুদিনী সরকারি কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের সামনে থেকে টেন্ডার ছাড়াই গোপনে মেহগনি গাছসহ বিভিন্ন ধরনের ১০/১২টি গাছ কেটে ফেলা হয়। আর এ গাছ কাটার কাজে সহায়তা করেন শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার মনসুর নামের এক কাঠমিস্ত্রী। গাছগুলো কাটার পর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় তালতলা এলাকার চান মিয়া নামে এক ব্যক্তির স’মিলে (করাতকল)। সেখানে কাঠগুলো চিরাই করা হয়। আর এই গাছ কাটার একটি ভিডিও আসে বাংলানিউজের কাছে। এ নিয়ে পরদিন শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কলেজের এক শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। ঘণ্টাখানেক পরেই অধ্যক্ষ আলিম আল রাজির নির্দেশে চিরাই করা কাঠগুলো তিনটি ভ্যানে করে কলেজের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ভেতরে নেওয়া হয়।
সেসময় কলেজের ভেতর থেকে বের হওয়া এক নারী জানান, চিরাই করা কাঠগুলো হোস্টেলের ভেতরে রাখা হচ্ছে। সেগুলো দিয়ে ছাত্রীদের ভেঙে যাওয়া আসবাবপত্র মেরামত করা হবে বলে তিনি শুনেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে শহরের তালতলা এলাকার চান মিয়ার স’মিলে (করাতকল) গিয়ে দেখা যায় সামনেই রেখে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি মেহগনি গাছের গুঁড়ি। সেগুলো কিনতে ক্রেতা পরিচয়ে কথা হয় চান মিয়ার সঙ্গে।
তিনি জানান, প্রতিটি গাছের গুঁড়িতে ২০/২২ সিএফটি কাঠ হবে। প্রতি সিএফটি ১১শ টাকা করে রাখা যাবে। গাছের গুঁড়িগুলো কোথা থেকে এনেছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এগুলো কুমুদিনী সরকারি কলেজের গাছ। এগুলো কলেজের শিক্ষক আব্দুল্লা দেওয়ান এবং কাঠমিস্ত্রি মনসুর এনেছেন। আরও ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই তারা প্রায় ৮০ সিএফটি কাঠ ভাঙিয়ে নিয়ে গেছেন। চান মিয়া আরও জানান, মাঝে মধ্যেই কলেজের গাছ কেটে এখানে আনা হয়।
কাঠমিস্ত্রী মনসুর জানান, গাছগুলো কলেজের অধ্যক্ষ এবং আব্দুল্লা দেওয়ান স্যারের নির্দেশে কাটা হয়েছে। কয়েকটি গাছ চিরাই করে কাঠগুলো কলেজে রাখা হয়েছে। সেগুলো দিয়ে কলেজের ভেতরে ৫০১ নম্বর ঘরের বারান্দা দেওয়া হবে। এছাড়া স’মিলে আরও গাছের গুঁড়ি রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
গণিত বিভাগের প্রধান আব্দুল্লা দেওয়ান জানিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। যদি কিছু জানতে চান তাহলে প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আলিম আল রাজি বাংলানিউজকে জানান, গাছ কাটার ঘটনা তিনি জানার পরপরই ২৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. আজাদ খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ইতোমধ্যেই বেশ কিছু কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে স’মিলে গাছের গুঁড়ি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি জানেন না।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বাংলানিউজকে জানান, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের মাধ্যমে সেটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে টেন্ডার আহ্বান করে সেই গাছ কাটা হয়। কিন্তু কুমুদিনী সরকারি কলেজের গাছ কাটার বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, সরকারি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটা বা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বায়ন বাধ্যতামূলক। বিনা টেন্ডারে কেউ গাছ কাটা বা অবকাঠামো তৈরি করতে পারবেন না। আর কুমুদিনি সরকারি কলেজের কাছ কাটার বিষয়ে তার কাছে কোনো আবেদন আসেনি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বাংলানিউজকে জানান, কুমুদিনী সরকারি কলেজে গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
আরএ