খুলনা: আপিল ট্রাইবুনাল থেকে ডিক্রি পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসককে অর্পিত সম্পত্তি ফেরৎ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন বাস্তবায়ন ও সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধ : সরকার ও নাগরিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই দাবি জানান।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সেল আয়োজিত এ সেমিনারের সহযোগী আয়োজক ছিল বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান রূপান্তর।
রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহর সভাপতিত্বে খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উপ-পরিচালক অ্যাডভোকেট বরকত আলী।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী। আর সেমিনার সঞ্চালনা করেন রূপান্তরের প্রকল্প সমন্বয়কারী অসীম আনন্দ দাস।
সেমিনারে কাজল দেবনাথ বলেন, ট্রাইবুন্যাল এবং আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ করা হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের রায় থাকা সত্ত্বেও ডিসি, এসিল্যান্ডরা আবার কাগজ পত্র নিয়ে বিচার করতে বসে। আদতে যে ক্ষমতা তাদের নেই।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলায় ডিসিদের সঙ্গে কথা বলছি, তারা আশ্বস্ত করলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। একবিন্দু জমিও আমরা ছাড়ব না। আমাদের লড়াই চলতেই থাকবে।
শামসুল হুদা বলেন, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে আমাদের আর কত বছর আন্দোলন করতে হবে তা জানি না। কোন অবস্থায় আমলারা এ সম্পত্তি ফেরত দিতে চান না। একটার পর একটা অজুহাত তারা দাঁড় করায়। এই আইনটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সদিচ্ছা দেখিয়েছেন তা ভ্রূক্ষেপ না করে আমলারা বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করছেন। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন প্রতিরোধে আইন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে গত ৪০ বছর ধরে এটা নিয়ে আন্দোলন করছি কিন্তু তার সুফল পাচ্ছি না। আমাদের সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। এ মামলা কোন অবস্থায়ই হিন্দু আইন অনুয়ায়ী হবে না। এটা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী হবে। তাই বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই।
অ্যাডভোকেট বরকত আলী বলেন, আমরা দেখি শুধুমাত্র একটি পোস্ট দেওয়ার কারণে কাউকে দিনের পর দিন আটকে রাখা হচ্ছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের উপর যারা আক্রমণ করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা।
অ্যাড. সুলতানা কামাল বলেন, আমরা জানি গণতান্ত্রিক সরকার একটি নির্দেশনামূলক আইন তৈরি করে এবং সংবিধানে বলা আছে যে কোন বৈষম্যমূলক আইন বাতিল বলে গণ্য হবে। সুতরাং কোন অবস্থায়ই অর্পিত সম্পত্তি আইন থাকতে পারে না। যাদের কাছে এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া আছে তাদের মনোজগতের পরিবর্তন করতে হবে। আপনারা যদি প্রতি জেলায় সমস্যাগুলো নিয়ে একটি ডকুমেন্টেশন করতে পারেন, তবে তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে পারি। সংখ্যালঘুদের উপর যারা নির্যাতন করছে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদেরকেই আটকে রাখছে নিরাপত্তার কথা বলে। স্বাধীন দেশে জেলখানা কখনও নিরাপত্তা হেফাজত হতে পারে না। বৈষম্য বিলোপ আইন খসড়া হয়ে থাকলেও তা সংসদে উত্থাপন করা হচ্ছে না।
সভাপতি হিসেবে স্বপন কুমার গুহ বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের বলেছেন, আমি এই আইন বাস্তবায়নে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন। তার কাছে প্রত্যর্পণের ডিক্রি গেলে তিনি দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন। তিনি বলেন, আপনারা কোন উদ্যোগ নিলে আমরা সবসময় আপনাদের পাশে দাঁড়াব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮ , ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড