ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আড়াই লাখ বীরাঙ্গনা কেন ৪১৬ জন হলো?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
আড়াই লাখ বীরাঙ্গনা কেন ৪১৬ জন হলো?

ঢাকা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আড়াই লাখ বীরাঙ্গনা কেন ৪১৬ জন হলো, এই প্রশ্ন তুলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।  

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডির নগর হাসপাতালে বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহার খানমকে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রশ্ন করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আড়াই লাখ বীরাঙ্গনার হিসাব, নাম, পরিচয় রাষ্ট্রকে দিতে হবে। আড়াই লাখ বীরাঙ্গনার কথা বলা হয়। কিন্তু স্বীকৃতি পেয়েছে মাত্র ৪১৬ জন। এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক আর কী হতে পারে। আড়াই লাখ বীরাঙ্গনা কেন ৪১৬ জন হলো।

তিনি আরও বলেন, আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা যুদ্ধ করেছি একবার, একাত্তর সালে ৯ মাস। কিন্তু বীরাঙ্গনা যারা আছেন, তারা যুদ্ধ করেছেন বারবার। একাত্তরে যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধের পর যুদ্ধ করেছেন, এখন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বলা হয়, বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছেন ববঙ্গবন্ধু। এটা সত্য নয়। ২২ ডিসেম্বর এই উপাধি দিয়েছিলেন সম্ভবত কামারুজ্জামান।  

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বীরাঙ্গনাদের অবদান কোনো অংশে কম তো নয়ই, বরং অনেক বেশি। আমরা মুজিব শতবর্ষ পালন করছি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, এখন এই বীরাঙ্গনাদের সম্মান দিতে হবে। রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে আড়াই লাখ বীরাঙ্গনার হিসাব, নাম, পরিচয় দিতে।

বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহার খানম গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার এখানে বীরাঙ্গনা জয়গুন এতদিন ধরে আছে। কিন্তু আমি অনেক দিন ধরে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারিনি। কারণ পাকিস্তানিরা তাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, আমরা তার চেয়েও বেশি খারাপ আচরণ করেছি তাদের সঙ্গে। জয়গুন যদি আমাকে বলে আপনি তো মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলাদেশে আমার জন্য কী করেছেন আপনারা। তার সামনে দাঁড়িয়ে তার মতোই দুই ফোটা চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কী করতে পারতাম আমি?

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অশ্রুভেজা চোখে একাত্তরে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস নির্যাতনের কথা তুলে ধরে জয়গুন নাহার বলেন, বাবা আর ভাইদের মারতে মারতে অচেতন করে পাকিস্তানি হানাদাররা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ক্যাম্পে পাঁচ-ছয় মাস ধরে চারজন পাকসেনা দিন-রাত নির্যাতন চালাতো। সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল আমার। সুযোগ বুঝে একদিন পালিয়ে আসি সেখান থেকে।

বীরাঙ্গনা জয়গুন আরও বলেন, যুদ্ধ শেষে ফাল্গুনে জন্ম হয় তার মেয়ে নিমসানার। এরপর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। পরিবার, সমাজের নানা কটু কথা শুনে দিন পার করতে হয় মা, মেয়েকে।  

এভাবে ৫০ বছর কেটেছে জয়গুনের। পাননি কোনো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা। এখন বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। যুদ্ধদিনে জয়গুনের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে উপস্থিত অতিথিরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা জয়গুন নাহার খানমের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক বদরুল হক। বক্তব্য দেন নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সভানেত্রী ফরিদা আখতার, নারী পক্ষের সদস্য লিপি লিলিয়ান রোজারিও, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এইচ শাহরিয়ার সাবেত প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
আরকেআর/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।