খুলনা: খুলনা মহানগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন পাটকল শ্রমিকরা। বছরের শেষ দিন শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
সরকারি সিদ্ধান্তে উৎপাদন বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলের মধ্যে (খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল, চট্টগ্রামের কেএফডি, আর আর এবং সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল) ৫টি জুট মিলের শ্রমিকদের ১ জুলাই’ ২০১৫ এর প্রাপ্য বকেয়া বেতন, খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, নাম ভুলের শ্রমিকদের ন্যায় সঙ্গত পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী পরিশোধের দাবি এবং কারখানা কমিটির সহ-সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ চাঁন মিয়া সর্দার ও ফোরকানের ওপর হামলার প্রতিবাদে খালিশপুর-দৌলতপুর জুট মিল কারখানা কমিটির উদ্যোগে এই সড়ক অবরোধ করেন পাটকল শ্রমিকরা।
এর আগে বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে খালিশপুর জুট মিল গেট থেকে পাটকল শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নতুন রাস্তার দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ দফায়-দফায় বাঁধা দেয়। সেই বাঁধা উপেক্ষা করে বার বার শ্রমিকরা নতুন রাস্তার দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
কিন্তু মিছিলটি খালিশপুর বিআইডিসি রোডের কাশিপুর মোড়ে এলে পুলিশ কড়া প্রহরা দিয়ে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের ঘিরে রাখে। ফলে নতুন রাস্তা মোড় অবরোধের পরিবর্তে কাশিপুর মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে বাধ্য হন শ্রমিকরা। এতে সভাপতিত্ব করেন কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য ডালিম কাজী।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক খান, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য খুলনা জেলা সমন্বয়ক রুহুল আমিন, প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সিবিএ নেতা মো. খলিলুর রহমান, কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহ্বায়ক মো. অলিয়ার রহমান, কারখানা কমিটির সহ-সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, মো. উজ্জ্বল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, কারখানা কমিটির কোষাধ্যক্ষ চাঁন মিয়া সর্দার, প্রচার সম্পাদক মো. শামীম, ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকনেতা মোশাররফ হোসেন, জেজেআই শ্রমিকনেতা শামস শারফিন শ্যামন, নাসিম উদ্দীন জয়, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আল আমিন শেখ।
অবরোধ করতে না দেওয়ায় এবং পুলিশ কর্তৃক বার বার বাঁধা দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, সরকার মহামারি করোনার সময়ে শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে প্রায় ৬০ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব কর্মহীন অভুক্ত শ্রমিকের জীবন অনিশ্চিত ও দিশাহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে সব পাটকল শ্রমিকরা সম্পূর্ণ প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ফলে তারা স্ত্রী, সন্তানদের লালন-পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। পাটকল বন্ধের ২ বা ৩ মাসের মধ্যেই শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা স্ট্রোক, হার্ট, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত। অথচ টাকার অভাবে তাদের চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ায় শ্রমিক-কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
বক্তারা খুলনার চাকরিহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পাটকলের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী প্রাপ্য বেতন, বকেয়া ৬টি বিলসহ অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানান। নতুবা বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড