কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় পৌর কাউন্সিলর কর্তৃক বিদ্যালয়ের জায়গা দখলে বাধা দেয়ায় আবারও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চনার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে এবং বিচার দাবিতে বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) সাব্বিরুল আলম ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের দাবি মানা হবে এমন আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরিদর্শনকালে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শিক্ষক লঞ্চনার বিরুদ্ধে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া পৌর এলাকাধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম তার নিজ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. সোহেল রানা আশা কক্ষে প্রবেশ করে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রধান শিক্ষককে মারতে শুরু করেন। তখন তাকে উদ্ধারে অন্য শিক্ষকরা এগিয়ে গেলে তাদেরও ওই কাউন্সিল বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ করে অন্য শিক্ষকরা।
প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা বিদ্যালয়ের মাঠে ইট বালু, খোয়া, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রেখে বাচ্চাদের অ্যাসেম্বলির স্থানসহ খেলাধুলার জায়গা দখল করে রেখেছেন। এছাড়া স্কুলে প্রধান গেটের মুখে প্রায় দিনই ক্রাসার মেশিনে খোয় ভাঙার বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের পাঠদানও ব্যহত হচ্ছে। করোনাকালের দুই বছর শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকায় তেমন কোনো সমস্যা না হলেও এখন যেহেতু সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম চলছে; এই বিষয়টাই জানিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কাউন্সিলর সাহেবকে অনুরোধ করে আসছি এসব নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ের গেটে আবার ক্রাসার মেশিন চালু করায় সেটি বন্ধ করতে বলেছি বলে কাউন্সিলর আশা সাহেব আমার ওপর হামলা চালিয়েছেন। এসব নিয়ে বেশি বাড়াবড়ি করলে তিনি প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়ে যান। আমি এখন চরম ভীত সন্ত্রস্ত। বিষয়টি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কুষ্টিয়া মডেল থানায়। আমি বিচার চাই।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও কুষ্টিয়া পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে জ্যেষ্ঠ সাবেক প্যানেল মেয়র মতিয়ার রহমান মজনু বলেন, স্থানীয় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সির সোহেল রানা আজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় অপরাধ। এছাড়া কাউন্সিলরে প্রভাব দেখিয়ে এভাবে তার ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য নির্মাণ সামগ্রী রেখে বিদ্যালয়ের মাঠ দখলে রেখে বাচ্চাদের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার কোন অধিকার তিনি রাখেন না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইদানিং স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লঞ্চনার ঘটনা ঘটেই চলেছে। জেলা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা বোর্ডের নিদের্শনায় দৌলতপুরের মথুরাপুর ও বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার তদন্তে পাওয়া সত্যতার ভিত্তিতে কিছু আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আজকের ঘটনাটিকেও আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখছিনা। একেবারে অন্যায়ভাবে একজন জনপ্রতিনিধি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এভাবে প্রহার করবে এটা কোনো ভাবেই তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তাছাড়া শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে অভিযুক্ত পৌর কাউন্সিলর সোহেল রানা আশাকে তার বাড়িতে, পৌর সভায় এবং কর্মস্থল কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরের ভ্যান্ডারখানায় খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে কলরিসিভের অনুরোধ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামলার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের দেয়া লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে আমলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই সঙ্গে ওই স্কুলের মাঠ থেকে সকল নির্মাণ সামগ্রী দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্যও বলেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২২
এনটি