ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা বলেছেন, শুধু রাজনীতি নয়, বাংলাদেশে তার বসবাসেরও অধিকার নেই। এ মন্তব্যের জন্য ফখরুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দাবিও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সেখানে বিএনপি মহাসচিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দাবি করেন সংস্কৃতিজনরা।
এ সময় ফখরুলের ওই বক্তব্যকে বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার বিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপির পাকিস্তান ঘেঁষা রাজনীতি আরও সুস্পষ্ট হয়েছে।
জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান, জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী, সহসভাপতি কামাল পাশা চৌধুরী, জোটের কার্যনির্বাহী সদস্য সঙ্গীতা ইমাম, অনন্ত হীরা, রেজিনা ওয়ালী লীনা, মিলন কান্তি দে, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানজার চৌধুরী সুইট।
সমাবেশের প্রারম্ভিক বক্তা সঙ্গীতা ইমাম বলেন, মির্জা ফখরুলের এই ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে বিচারের আওতায় আনা হোক। একইসঙ্গে বলতে চাই, এ কাণ্ডে মির্জা ফখরুলের শুধু রাজনীতি নয়, এ দেশে থাকার অধিকারও নেই।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বলেন, কয়েক হাজার বছরের বাঙালির সংস্কৃতি তাতে বাংলাদেশ কখনোই পাকিস্তানে পরিণত হবে না। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও আদর্শিক বাস্তবতার সাথে বাংলাদেশের সংস্কৃতির তফাৎ অনেক। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম ২ হাজার ৫০৩ ডলার, পাকিস্তানের ১৫৬২ ডলার। সব দিক থেকে পাকিস্তানও বলছে, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ভাগ হয়ে অনেক ভালো আছে। যাদের এই এগিয়ে যাওয়া ভালো লাগছে না, তারা পাকিস্তানে চলে যাক!
মিনু হক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর। মির্জা ফখরুলের যদি এতই খারাপ লাগে, তবে তিনি এখানে রয়ে গেছেন নির্লজ্জের মতো? কেন পাকিস্তানে চলে যাচ্ছেন না?
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, মির্জা ফখরুল দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের মহাসচিব। তার বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, ইতিহাসের চাকাকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। তার ওই বক্তব্য প্রমাণ করে বিএনপির পাকিস্তান প্রীতিকে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি পঁচাত্তরের পনের আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা জানতেন, পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছিলেন তাতে।
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, তারা আজ এমন কিছু দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য করেছে, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। এখন তারা নতুন নতুন কৌশল নিয়েছে রাজনীতিতে, কিন্তু তাদের রাজনীতির ধারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। তারা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র চায়। মির্জা ফখরুল মুখ ফসকে সেই সত্য কথাটি বলে দিয়েছেন।
গোলাম কুদ্দুছ আরও বলেন, মির্জা ফখরুল দেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার বিরুদ্ধে গিয়ে যে কথা বলছেন, তাতে একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনকে অপমান করা হয়। তাকে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ বলেন, আজকে ঘুমের ঘোরে হোক বা জাগরণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কথা বলেছেন, তাতে পাকিস্তানের সেই শক্তি যারা একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, তাদের কথাই উচ্চারিত হয়। এই শক্তি কখনও মন্দির ভাঙে, নারীর টিপ পরার স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, আবার কখনও নারীর পোশাক নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
এইচএমএস/এমজে